ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের লেখা ‘হযবরল’ পড়েনি, এমন বাঙালি হাতে গোনা। ‘ছিলো বেড়াল, হলো রুমাল’ প্রায় সকলেরই স্মৃতিতে এখনও টাটকা। তবে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সকলের অগোচরেই যে ‘হযবরল’টা হয়ে গিয়েছে, তা বোধহয় এখনও চোখে পড়েনি সকল বাঙালির। হ্যাঁ, ঠিক তাই। কারণ কবে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলায় লেখা ‘জন গণ মন’ বদলে হিন্দী টানে ‘জানা গাণা মানা’ হয়ে গেল, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। ইদানীং সিনেমা হল থেকে শুরু করে খোদ বাংলার নানা অনুষ্ঠানেও হিন্দী উচ্চারণের জাতীয় সঙ্গীতই পরিবেশন করা বা বাজানো রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে ভাষা সচেতন নাগরিকমহলের একাংশের বক্তব্য, এর মাধ্যমে হিন্দীর অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে। তাঁদের যুক্তি, অন্যান্য ভাষার মানুষ যে ভাবেই উচ্চারণ করুন না কেন, খাস বাংলায় শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণেই জাতীয় সঙ্গীত হোক। প্রসঙ্গত, সোমবারই প্রবীণ অভিনেতা তথা রাজনীতিবিদ কমল হাসান হিন্দী আগ্রাসন বিতর্কে জাতীয় সঙ্গীতে নিহিত উজ্জ্বল বহুত্ববাদ নিয়ে দেশবাসীর কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। বাংলার বহু বিশিষ্ট নাগরিক এবং কিছু সংগঠনেরও ধারণা, ‘জনগণমন’ থেকে ‘জানা গানা মানা’ উচ্চারণই সেই আগ্রাসনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
সঙ্গীত শিল্পী কবির সুমনের বক্তব্য, ‘এর বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের প্রয়োজন এসেছে। বহু বছর ধরে এই ভাবে সারা ভারতের উপর হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার কাজ চলেছে।’ শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি জানাচ্ছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বাংলায় ধাঁচায় সংস্কৃতে এই গান রচনা করতে চেয়েছিলেন। জানা-গানা-মানা উচ্চারণটি ভুল এবং সেই ভুলটি বেশি করেন উত্তর ভারতীয় হিন্দীভাষীরাই। দক্ষিণে কিন্তু এমনটা কম।’ এছাড়া বেশ কিছু সংগঠনও বহুদিন ধরেই জাতীয় সঙ্গীতের শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের ভার্সন সিনেমা হল ও অন্যান্য বাজানোর দাবিতে সরব।
বহু মাল্টিপ্লেক্স এবং সিঙ্গল স্ক্রিনেও এই দাবিতে তারা ডেপুটেশন দিয়েছেন। বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন অ্যাকাডেমি-সহ নানা এলাকায়। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সম্পাদক তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদল এক দেশ, এক ভাষা, এক দলীয় রাজনৈতিক কাঠামো করার যে চেষ্টায় নেমেছেন, এটা সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ। আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি।’ আর বাংলা পক্ষ নামক সংগঠনের তরফে সংগঠক কৌশিক মাইতি জানান, এই ইস্যুতে আবার রাস্তায় নামার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।