বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা চার ব্যাটসম্যান ধরা হয় ভারতের বিরাট কোহলি, অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ, ইংল্যান্ডের জো রুট এবং নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনকে। অনেকেই মনে করেন, তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট ধরলে বিরাটই সেরা। কিন্তু কথা যদি হয় টেস্ট নিয়ে, তা হলে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন স্মিথ। সেরকমই বলছেন প্রাক্তন প্লেয়াররা। শুধু প্রাক্তনরা বললে ভুল হবে। এমন কথাই বলছে পরিসংখ্যান।
বল বিকৃতি, এক বছরের নির্বাসন, অস্ট্রেলীয় জাত্যাভিমানে আঘাত, জাতীয় খলনায়কে পরিণত হওয়া স্মিথ অ্যাশেজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে এলেন রাজার মতো। সম্প্রতি শেষ হওয়া অ্যাশেজের পাঁচটি টেস্টের মধ্যে তিনি খেলেছিলেন চারটি। কিন্তু রান সংগ্রহের তালিকায় তিনি আছেন সবার ওপরে। সাত ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ ৭৭৪ রান। গড় ১১০.৫৭। কেরিয়ারে স্মিভ স্মিথ ইতিমধ্যেই খেলে ফেলেছেন ৬৮টি টেস্ট। তাই সেদিক দিয়ে বিচার করার হলে দেখে নেওয়া যাক ৬৮টি টেস্টের পর বিশ্বের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানদের তালিকায় কে কোথায় দাঁড়িয়ে।
৬৮টি টেস্ট শেষে স্মিথের সংগ্রহ ৬৯৭৩ রান, গড় ৬৪.৫৬। এখনো অবধি ব্যাটিং গড়ের নিরিখে শীর্ষে তিনিই। অ্যাশেজের ফর্ম ধরে রাখলে ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে থামবেন বলা কঠিন। এরপরে নাম আসতে পারে গ্যারি সোবার্স। এই কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার সারা জীবনে খেলেছেন ৯৩টি টেস্ট। সংগ্রহ ৮০৩২ রান এবং গড় ৫৭.৭৮। কিন্তু ৬৮টি টেস্ট শেষে ব্যাটিং গড়ের বিচারে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর গড় ছিল ৬২.০৫।
ডানহাতি ইংরেজ ব্যাটসম্যান লিওনার্ড হাটনের নামও পিছিয়ে থাকবে না এই তালিকায়। আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৩৭ সালে। ১৮ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে খেলেছিলেন ৭৯টি টেস্ট। কিন্তু ৬৮টি টেস্টের পর তাঁর গড় ছিল ৬০.২৪। এই তালিকায় তিনি তৃতীয়। চতুর্থ স্থানে থাকবেন আরেক ইংরেজ ব্যাটসম্যান ওয়ালি হ্যামন্ড। ৮৫ টেস্টে যাঁর সংগ্রহ ছিল ৭২৪৯ রান, গড় ৫৮.৪৫। ২০ বছরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ২২টি সেঞ্চুরি আছে তাঁর ঝুলিতে। ৬৮টি টেস্ট শেষে গড় ছিল ৫৯.৯৫।
তালিকায় পাঁচ নম্বরে থাকবেন কেন ব্যারিংটন। ১৯৫৫ সালে তিনি প্রথম টেস্ট খেলেছিলেন। ১৩ বছর ধরে ৮২ টেস্টে সংগ্রহ ৬৮০৬ রান, গড় ৫৮.৬৭। ৬৮ টেস্ট শেষে তাঁর গড় ছিল ৫৭.১২।
তালিকায় এরপরে নাম আসবে কুমার সাঙ্গাকারার। শ্রীলঙ্কার এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বিশ্ব ক্রিকেটে বোলারদের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন তাঁর সময়। ১৫ বছরের কেরিয়ারে ১৩৪টি ম্যাচ খেলে ১২,৪০০ রান করেন। গড় ৫৭.৪০। কিন্তু ৬৮ টেস্ট শেষে তিনিও গড়ের বিচারে স্মিথের নীচেই ছিলেন। তাঁর গড় ছিল ৫৫.৭৩। ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন তিনি।
সপ্তম স্থানে জায়গা করেছেন পাকিস্তানি কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদ। ১২৪ ম্যাচে করেছিলেন ৮৮৩২ রান। সেরা ২৮০ নটআউট, গড় ৫২.৫৭। কিন্তু ৬৮ টেস্ট শেষে গড় ছিল ৫৪.৮২। ভিভিয়ান রিচার্ডসের মতো বিধ্বংসী ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান রয়েছেন এই তালিকার অষ্টম স্থানে। টি-টোয়েন্টির যুগে ব্যাট ধরলে হয়তো চিন্তায় ফেলতেন এখনকার বোলারদের। ১২১টি টেস্টে তাঁর সংগ্রহ ৮৫৪০ রান, গড় ৫০.২৩। ৬৮ টেস্টে তাঁর গড় ছিল ৫৪.৫৫।
সচিন তেন্ডুলকরের মত আধুনিক ক্রিকেটের ডনকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন স্টিভ স্মিথ। ২০০টি টেস্টে ১৫,৯২১ রান, গড় ৫৩.৭৮। কিন্তু ৬৮ টেস্ট শেষে তাঁর গড় ছিল ৫৪.৪৯। সচিনকে ছুঁতে পারেন এমন ব্যাটসম্যানদের অন্যতম স্মিথ। এই তালিকায় লিটল মাস্টারকে পিছনে ফেলে দিলেও রান বা শতরানে টপকে যেতে পারবেন কিনা সময় বলবে। এই তালিকায় সচিন রয়েছেন নবম স্থানে। দশম স্থানে আছেন ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টারবয় বিরাট কোহালি। এই সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। কিন্তু ৬৮ টেস্টের পর তাঁর সংগ্রহ ছিল ৫৭৯৪ এবং গড় ৫৩.৬৪। এই মুহূর্তে তিনি খেলে ফেলেছেন ৭৯ টেস্ট। রান ৬৭৪৯, গড় ৫৩.১৪, সেঞ্চুরি করেছেন ২৫টি।