ভারতের কোনো রাষ্ট্রীয় ভাষা নেই। ভারতীয় সংবিধানে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা বলে স্বীকৃতি দেওয়া নেই। ভারতে বহু ভাষা-ভাষীর মানুষ বাস করেন। সেখানে একটি ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া চলে না। তবে মোদী সরকারের আমলে বারবার দেশের মানুষের ওপর হিন্দী ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সওয়াল করেছেন। হিন্দী দিবসেও ‘এক রাষ্ট্র, এক ভাষা’- হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহবলেছিলেন, ‘ভারতে বহু ভাষা রয়েছে। প্রত্যেকটির গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু দেশের একটি ভাষা থাকা প্রয়োজন, যাকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেবে ভারতীয় ভাষা হিসেবে। যদি কোনও ভাষা দেশকে বাঁধতে পারে, তা হিন্দী।’ আর এই মন্তব্যের পরপরই সারা দেশজুড়ে বিরোধীদের নিশানায় পড়েছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, বহু সাধারণ মানুষ হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করেছেন।
সেই বিরোধিতা দেশের নানা প্রান্ত থেকে উঠছে। সেই বিক্ষোভেই এইবার পা মেলালেন কলকাতার একটি সংগঠন। ‘সে নো টু হিন্দী ইমপোজিশন’ প্ল্যাকার্ড হাতে বহু মানুষ এদিন কলেজ স্ট্রিটে জমা হন। তীব্র নিন্দা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই হিন্দী আগ্রাসনের মন্তব্য নিয়ে। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যের জন্যে তাঁর ছবিও পোড়ানো হয়। শুধু যে বাঙালিরা এতে যোগ দিয়েছিলেন তা নয়, ভিন্ন ভাষার বহু মানুষও তাতে যোগ দেন।
কলকাতায় যখন এই চিত্র, পিছিয়ে নেই রানীগঞ্জও। বাংলা ভাষার জন্যে কাজ করা ‘বাংলা পক্ষ’-র তরফে নামা হয় আন্দোলনে। বাংলা পক্ষের তরফে একটি সভা করা হয় রানীগঞ্জ গার্লস স্কুলে। গোটা জেলায় যথেষ্ট শিল্প থাকলেও স্থানীয়দের কাজে নেওয়া হয় না। অভিযোগ, শ্রমিক বা কর্মচারী নিয়ে আসা হয় মূলত হিন্দী বলয়ের রাজ্য থেকে।
এখানেই শেষ নয়, রানীগঞ্জে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মূর্তির পাদদেশে ‘হিন্দী ভারতের রাষ্ট্রভাষা’, ‘হিন্দী একতার ভাষা’, ‘এক দেশ, এক ভাষা’ লেখা কাগজ পুড়িয়ে ও স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সংগঠনের তরফে স্পষ্টই দাবি করা হয়, ‘ভারতের কোনও রাষ্ট্রভাষা নেই, হবে না৷ বাংলা পক্ষ তা হতে দেবে না৷ গোটা বাংলা জুড়ে আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়বে৷ হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী সাবধান।’ মোদী সরকারের এহেন কার্যকলাপে ক্ষুন্ন দেশের একটি বড় অংশ। এইরকম চাপিয়ে দেওয়াকে প্রশয় দিতে নারাজ তাঁরা।