অ্যাশেজে অসাধারণ পারফরম্যান্স করছেন তিনি। নিজেকে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাঁর ধৈর্য, অধ্যাবসায়, মানসিক জোরকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা বিশ্ব। তবে কোথাও গিয়ে বল-বিকৃতি কাণ্ডের কলঙ্ক পিছু ছাড়ছে না অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ স্টিভ স্মিথের। তাঁকে নিয়েই দ্বিবিভিক্ত অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন তারকারা। সেই কলঙ্কের বোঝা অনেকটাই বোঝা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে অ্যাশেজের এই পারফরম্যান্স, ধারণা গ্লেন ম্যাকগ্রার। কিন্তু প্রাক্তন পেসার স্টিভ হার্মিসন যদিও জানিয়েছেন, স্মিথকে প্রতারক হিসেবেই মনে রাখবে ক্রিকেটবিশ্ব।
প্রসঙ্গত, বল-বিকৃতি কাণ্ডের পরে অস্ট্রেলীয় জাতীয় খলনায়ক হয়ে উঠেছিলেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফ্ট। বাকি দু’জন নিজেদের সে ভাবে প্রমাণ করতে না পারলেও স্মিথের প্রত্যাবর্তন ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। চার ম্যাচের মধ্যে তিন ম্যাচ খেলে স্মিথের রান ৬১৭। ম্যাকগ্রা মনে করেন, এই পারফরম্যান্সের পরে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ সমর্থকেরাই ক্ষমা করে দেবেন।
সোমবার এক ইংলিশ সংবাদমাধ্যমকে প্রাক্তন পেসার বলেন, ‘‘২০০১-এর পরে এই প্রথম ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ ধরে রাখল অস্ট্রেলিয়া। আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসে এটা অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। কারণ, ১৮ মাস আগে বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারি আমাদের দলকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এ রকম একটি উপহার ওরা ফিরিয়ে দিতে পারে, অনেকেই ধারণা করতে পারেননি।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এই জয় আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেবে। আরও এক বার ক্রিকেট বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়ে নিতে শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। হয়তো সমর্থকেরা ওদেরকে এ বার ক্ষমা করে দেবে।’’
অ্যাশেজ চলাকালীন স্মিথরা যে ভাবে ক্রিকেট বিশ্বের থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তা দেখে মুগ্ধ কিংবদন্তি পেসার। বলছিলেন, ‘‘ইংল্যান্ডের মাটিতে এক টেস্ট বাকি থাকতে অ্যাশেজের দখল নেওয়া প্রচণ্ড কঠিন। তার উপর এত বড় কলঙ্কের স্বীকার থেকে অস্ট্রেলিয়া ফিরেছে, তাই বিষয়টি কঠিনতর হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে থেকেও চাপমুক্ত মনোভাবে ওরা যে ক্রিকেট উপহার দিয়েছে, তার প্রশংসা না করে থাকা যায় না। এ বার থেকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে আর পিছনে তাকাতে হবে না।’’
ম্যাকগ্রা চান ইংল্যান্ডের মাটিতে এ বার সিরিজ জিততে। বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপের পর থেকেই অ্যাশেজের প্রস্তুতি শুর হয়ে গিয়েছিল আমাদের। ‘ইংলিশ সামার’-এ কী ভাবে ব্যাটিং করা উচিত, তা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছে আমাদের ব্যাটসম্যানেরা। তার ফলই পেয়েছে। এ বার অ্যাশেজ ওরা প্রমাণ করে দিক, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট এখনও শেষ হয়ে যায়নি।’’
ম্যাকগ্রার বিপরীত মন্তব্য করে হার্মিসন বলেছেন, ‘‘কোনও ভাবেই স্মিথকে ক্ষমা করা যায় না। ও যে প্রতারক, তা কখনও ভুলবে না ক্রিকেটবিশ্ব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও বড় অপরাধের পরে কী কাউকে ক্ষমা করা যায়? সে রকমই এক বার প্রতারকের তকমা পড়ে গেলে তা মুছে ফেলাও কঠিন। স্মিথরা যতই ভাল খেলুক। আমার চোখে ও প্রতারক হিসেবেই থেকে যাবে।’’ এখন এটাই দেখার কিভাবে স্মিথ তাঁর গায়ে লেগে যাওয়া কলঙ্ককে মুছে ফেলতে পারে। তিনি নায়ক না খলনায়ক? তর্ক থামার অপেক্ষায়।