‘দিস ইজ অসাম।’ দিন তিনেক আগে তাঁদের কীর্তিকলাপ দেখে এমনটাই বলেছিলেন অলিম্পিকে ৫ বারের সোনাজয়ী কিংবদন্তী জিমন্যাস্ট নাদিয়া কোমানেচি। তাঁদের ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপে মাতোয়ারা হয়েছিল দেশ-বিদেশের সোশ্যাল মিডিয়া। দেখা গেছিল, স্কুল ইউনিফর্মে, পিঠে ব্যাগ নিয়ে রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে আসা ওই দু’টি বাচ্চা ছেলে-মেয়েকে একেবারে নিখুঁত ভাবে ভল্ট দিতে। এবার খিদিরপুর এলাকার সেই দুই ছাত্রছাত্রী আলি (মহম্মদ ইজ়াজ়ুদ্দিন) ও লাভলির (জেসিকা খান) পাশে দাঁড়ালেন বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং রাজ্যের ক্রীড়া এবং যুবকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা।
আলি ও লাভলি মুগ্ধ লক্ষ্মীরতন স্যরের সঙ্গে দেখা করে। দু’জনেই বলে দেয়, ‘‘আগে মাইকেল জ্যাকসনের মতো নাচতে চাইতাম। কেকেআর-এর হয়ে লক্ষ্মীরতন স্যরের খেলা বাড়িতে টিভিতে দেখেছি। আজ স্যরের সঙ্গে কথা বলে দারুণ লাগল। আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো গল্প করলেন, উৎসাহ দিলেন স্যর। আমরা এ বার মন দিয়ে টুম্পাদিদির কাছে জিমন্যাস্টিক্স শিখে আরও বড় হতে চাই।’’
লক্ষ্ণীরতন বলেছেন, ‘‘রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ হিসেবেই আলি ও লাভলিকে নিখরচায় আমার অ্যাকাডেমিতে জিমন্যাস্টিক্স শেখাতে চাই। আর সেই দায়িত্ব দিয়েছি টুম্পা দেবনাথকে।’’ বুধবার দুপুরে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে আলি, লাভলি-সহ তাদের পরিবারকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন লক্ষ্মীরতন। সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, এই দুই খুদে প্রতিভা যতদিন জিমন্যাস্টিক্স শিখতে চায়, তত দিন নিজের অ্যাকাডেমিতে টুম্পার তত্ত্বাবধানে রেখে নিজের খরচে প্রশিক্ষণ দেবেন। যা শুনে আলির মা কায়সরি বেগম ও লাভলির বাবা তাজ খান উচ্ছ্বসিত”।
লক্ষ্মীরতন আরও বলছেন, ‘‘খেলাধুলো শুধু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই নয়। প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার জন্যই খেলার প্রয়োজন আছে। আলি ও লাভলির ভল্টের ভিডিয়ো দেখে চমকে গিয়েছিলাম। ওরা খিদিরপুরের বাসিন্দা জানার পরেই দু’জনকেই পরিবার-সহ ডেকে পাঠালাম।’’ যাঁর কাছে আলি ও লাভলি জিমন্যাস্টিক্সের পাঠ নেবেন সেই টুম্পা বলছেন, ‘‘ওরা দু’জনেই খুব প্রতিভাবান। শরীর নমনীয়। গতি আছে। নড়াচড়াও সাবলীল। তা ছাড়া ওরা নাচ জানে। আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স করতে গেলে এটা লাভলির কাজে লাগবে। আশা করছি, জিমন্যাস্টিক্সের আধুনিক প্রশিক্ষণ পেলে ওদের উৎকর্ষ বাড়বে।’’
হঠাৎ সেলিব্রিটি হয়ে গিয়ে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও, দুই খুদে জানিয়েছে, ভাল করে শিখে দেশের জন্য পদক আনতে চায় তারা! আলি জিমন্যাস্টিককে যেমন ভালবাসে তেমনই ভালবাসে তার শিক্ষককে। সে জানাচ্ছে, ‘আমি স্যরের মতো জিমন্যাস্টিক করতে চাই। দেশের জন্য সোনার পদক পেতে আর অন্য বাচ্চাদের শেখাতে চাই।’ লাভলির স্বপ্নও বিরাট। তার কথায়, ‘আমিও দেশের জন্য পদক আনতে চাই। আমার বাবা-মা আমাকে সব সময় সাহায্য করে। আমার বাবা বলেন, তুমি কেবল আমার মেয়ে নয়, ছেলেও। নিজের স্বপ্নকে নিয়ে বাঁচো।’