প্রথমে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বেঙ্গল কেমিক্যাল বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্তের পর এবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেস বন্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্ঠা! দিন দিন মোদী সরকারের দুঃসাহস বাড়ছেই। গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে যেন দিনে দিনে স্বৈরতন্ত্রের আস্ফালন নজরে আসছে। মোদী সরকার দ্বিতীয়বার তার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। কিন্তু ভারত গঠনের নামে ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করছে।
আসলে ১৯১৭ সালে ৮ জানুয়ারি রবীন্দ্রনাথ আমেরিকার অলিভার থিয়েটারে জাতীয়তাবাদ নিয়ে এক বক্তৃতা দেন। তার বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একটি বই ছাপার যন্ত্র উপহার দেন। তারপর তৈরি হয় শান্তিনিকেতন প্রেস। বিশেষ সূত্রে খবর, রবীন্দ্রনাথের সেই সাধের প্রেস বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিশ্বভারতীকে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সে সময় বিশ্বভারতী গড়ার প্রয়োজনে অর্থ সংগ্রহ করছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দেশে বিদেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। নানা জায়গা থেকে মিলছিল অনুদানও। লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ‘লিঙ্কন প্রেস’ উপহার দেওয়া হয় শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীদের। রবীন্দ্রনাথ নিজের হাতে এটি শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন। প্রতিষ্ঠা পায় শান্তিনিকেতন প্রেসের।
রবীন্দ্রনাথ এই প্রেসের দায়িত্ব দেন দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে। শান্তিনিকেতন প্রেসের রমরমা ছিল আগাগোড়াই। এই প্রকাশনার প্রথম ছাপা বই ছিল ‘গীত পঞ্চশিকা’। রবীন্দ্রনাথের স্বরলিপির সমগ্র এই বই ছাপা হয় ১৯১৮ সালে। এখান থেকেই প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম নাটক ‘বসন্ত’।
গত বছর শতবর্ষ পূরণ করে এই শান্তিনিকেতন প্রেস। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্দেশ এসেছে এই প্রেস পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেবার জন্য। স্বভাবতই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিশ্বভারতী তথা শান্তিনিকেতনের নাগরিক সমাজ।
মোদী সরকার ঐতিহ্যের দাম দিয়ে পারে না৷ সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার ক্ষমতা নেই পদ্মশিবিরের। তাই ইতিহাসকে বারে বারে মুছে ফেলতে তৎপর হয়েছে মোদী সরকার। উল্লেখ্য, আর এসএসের বিদ্যাভারতীর প্রাক্তন প্রধান দীননাথ বাত্রা বলেছিলেন, “জাতীয়তাবাদী মনোভাবের সঙ্গে রবীন্দ্রচেতনা খাপ খায় না। তাই ইংরেজি পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত অংশ বাদ দেওয়া উচিত”। শুধু এই নয়, আসামের বিজেপি সরকার কবি গুরুর জন্মদিন উপলক্ষে ২৫ শে বৈশাখ স্কুল কলেজ ছুটি দেওয়া বন্ধ করেছিল। এমনকি জালিয়ানওয়ালাবাগ ঘটনার কারণে রবীন্দ্রনাথ নাইটহুড ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগের শতবর্ষ উদযাপনে রবীন্দ্রনাথের নাম কোথাও উল্লেখ করা হয় নি।