‘শুধুমাত্র টাকা বিলিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়। ক্ষুদ্র মানসিকতা থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছে প্রকল্পগুলি। শুধুই ভাঁওতাবাজি।’ নরেন্দ্র মোদীর প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’ নিয়ে বলতে গিয়ে ঠিক এভাবেই তোপ দেগেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি যে মোটেও ভুল কিছু বলেননি, ফের মিলল তার প্রমাণ। বছর ঘুরতে চলল, অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের এই স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্প সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানেন না বিহার ও হরিয়ানার অধিবাসীরা। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত একটি সমীক্ষায়৷
আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের নোডাল এজেন্সি ‘ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি’ নামক সংস্থার তরফে করা এই সমীক্ষার রিপোর্ট সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে, যা দেখার পরে নড়েচড়ে বসেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকরা৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, আয়ুষ্মান ভারতের নোডাল এজেন্সি যে রিপোর্ট পেশ করেছে, সেখানে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে হরিয়ানাতে মাত্র ২০ শতাংশ লোক এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পর বিষয়ে সামান্য কিছু তথ্য জানেন, বাকিরা রয়েছেন পুরো অন্ধকারে৷ বিহারের পরিস্থিতি আরও খারাপ। সেখানে মাত্র ১০ শতাংশ লোকের কাছে পৌঁছেছে এই প্রকল্পের সুবিধে সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য৷
সমস্যার গভীরতা যে রীতিমত উদ্বেগজনক তা স্বীকার করছেন আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের নোডাল এজেন্সি, ‘ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি’-র কর্তারা৷ এক আধিকারিকের কথায়, ‘গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী এই স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্পর উদ্বোধন করার পরে দেশের ১০ কোটি ৭৪ লক্ষ পরিবারকে একটি চিঠি লিখেছিলেন৷ অন্যান্য রাজ্যের জনসাধারণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর লেখা সেই চিঠি পৌঁছয় বিহার ও হরিয়ানাতেও৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাড়িতে চিঠি পৌঁছে গেলেও, চিঠির বক্তব্য বুঝে উঠতে পারেননি তাঁরা। কারণ তাঁদের বেশির ভাগই লেখাপড়া জানেন না৷ ফলে বিহার ও হরিয়ানার একটা বিরাট সংখ্যক জনসাধারণের কাছে এত বড় কেন্দ্রীয় প্রকল্প এখনও অজানা৷’
তাঁর বক্তব্য, ‘সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমে বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়ে যে নিরক্ষর প্রান্তিক শ্রেণির কাছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধের কথা জানানো যাবে না, তা বুঝে উঠতেই আমাদের লেগে গেল এক বছর৷ এই পরিস্থিতিতে লড়াইটা যে বেশ কঠিন, তা সন্দেহ নেই৷’ তবে প্রকল্পের খবর পৌঁছলেই যে সকলে উপকৃত হবে, তা কিন্তু নয়। এই প্রকল্প সম্পর্কে যাঁরা জানেন, তাঁরাও সে অর্থে উপকৃত হননি। আসলে বেশিরভাগ মানুষ তো আওতাভুক্তই হতে পারেননি এই প্রকল্পের। যেমন পূর্ব উত্তরপ্রদেশের যেখানেই মানুষের ভারী অসুখ হোক না কেন, চিকিৎসার জন্য গাড়ি ভাড়া করে যেতে হয় লখনউ, এলাহাবাদ বা বারাণসীর হাসপাতালে।