আজ, সোমবার দিনের শুরুতেই সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছেন তিনি। শীর্ষ আদালতে খারিজ হয়েছে তাঁর জামিনের আর্জি। কিন্তু তাতেও দমে যাননি দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। বরং আজ সুপ্রিম কোর্টে গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে তিনি এই অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে যা অভিযোগ আছে, তা নাকি আগেভাগেই সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দিচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট। অথচ জানানো হচ্ছে না তাঁকে।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইএনএক্স মিডিয়া কেসে তদন্ত করছে ইডি। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে ইডি জানিয়েছে, চিদম্বরম তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মাধ্যমে ভারতে ও বিদেশে বেশ কয়েকটি ভুয়ো কোম্পানির জাল বিছিয়েছিলেন। তছরুপ করা অর্থ জমা রাখার জন্য তিনি ওই কোম্পানিগুলিকে ব্যবহার করতেন। কারা ওই ষড়যন্ত্রে চিদম্বরমকে সাহায্য করতেন তা ইডি জানায়নি। তাদের অভিযোগ, ভুয়ো কোম্পানিগুলিতে চিদম্বরম যে অর্থ জমা রেখেছিলেন, তার একটি অংশ আইএনএক্স মিডিয়া থেকে পাওয়া।
অভিযোগ, ২০০৭ সালে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন চিদম্বরম বেআইনিভাবে আইএনএক্স মিডিয়াকে বিদেশি বিনিয়োগ পাইয়ে দিয়েছিলেন। জেলবন্দী ইন্দ্রানীর বয়ান অনুযায়ী, ২০০৭ সালে চিদম্বরম অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন এফআইপিবি-র কাছে বিদেশি লগ্নীর আবেদন করে আইএনএক্স মিডিয়া। তাতে বিদেশি লগ্নির টাকা সহযোগী সংস্থাগুলিতেও বিনিয়োগের অনুমতি চায় তারা। কয়েক মাস পর আইএনএক্স মিডিয়াকে ৪ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা বিদেশি লগ্নীতে অনুমোদন দিলেও, সহযোগী সংস্থায় ওই টাকা বিনিয়োগে সায় দেয়নি এফআইপিবি।
তবে সেই নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে, ২০০৭-এর অগস্ট থেকে ২০০৮-এর মে মাসের মধ্যে ৮০০ টাকা দরে শেয়ার বেচে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩০৫ কোটি টাকার বেশি আদায় করে আইএনএক্স মিডিয়া। এ কারণে ২০০৮ সালে আইএনএক্স মিডিয়াকে আয়কর দফতর নোটিস ধরালে কার্তি চিদম্বরমের কনসাল্টিং কোম্পানীর দ্বারস্থ হয় তাঁরা। আর ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাঁদের বিদেশি লগ্নীর টাকায় ছাড়পত্র পাইয়ে দেন কার্তি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ছেলের সংস্থার হয়ে আইএনএক্সকে ওই অন্যায় সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন চিদম্বরম।
অন্যদিকে, আজ চিদম্বরমের করা অভিযোগ অস্বীকার করে ইডি সুপ্রিম কোর্টে বলেছে, আমরা কোনও গোপন তথ্য ফাঁস করে দিইনি। চিদম্বরম পুরো ব্যাপারটায় রাজনৈতিক রং দিতে চাইছেন। আমরা অভিযোগকারীকে জানিয়েছি, তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আছে। চিদম্বরমের আইনজীবীই টিভিতে এই মামলা নিয়ে নানা যুক্তি তর্ক পেশ করছেন। তবে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ইডির নথিপত্রে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আছে, তাঁকে জানানোই হয়নি।
আদালতে হলফনামায় ইডি বলেছে, আমরা জানতে পেরেছি, ভুয়ো কোম্পানিগুলি যারা অপারেট করত, তাদের সঙ্গে চিদম্বরমের যোগাযোগ ছিল। বেনামে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীই কোম্পানিগুলির মালিক ছিলেন। সেই সংস্থাগুলির মাধ্যমে বেআইনিভাবে পাওয়া অর্থ গচ্ছিত রাখা হত। এর পাশাপাশি ইডির তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, গত ১৯ ডিসেম্বর, ১ জানুয়ারি ও ২১ জানুয়ারি চিদম্বরমকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেননি। কোনও প্রশ্ন করলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারির পর জামিনের ব্যাপারে একটি বিশেষ আবেদন করেছিলেন চিদম্বরম। তবে আজ আদালতের কাজ শুরু হওয়ার পরেই বিচারপতি জানিয়ে দেন, তালিকাভুক্তই হয়নি চিদম্বরমের জামিনের মামলা। যেহেতু প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর এই বিশেষ আবেদনের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ কোনও নির্দেশ দেননি, তাই এই মামলা তালিকায় তোলা হয়নি। ফলে আজ এই মামলার আজ শুনানি হওয়া সম্ভব নয়।