মাঝে কেটে গেছে প্রায় ৫০ বছর। কিন্তু তাঁর গল্পে এখনও বুঁদ হয়ে কলকাতা ময়দানের আট থেকে আশির সমর্থককুল। এখনও তাঁর জন্য উপচে পরে ভালোবাসা। আর সেই ভালবাসার টানেই এতবছর পর ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে গতকাল রাতে কলকাতায় পা রাখলেন মজিদ বাসকার। আর এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন।
ফুটবল পায়ে ঠিক যে ভাবে কলকাতার মন জিতে নিয়েছিলেন এক সময়ে, রবিবার ভোররাতেও ঠিক সে ভাবেই শহরের মন জিতে নিলেন মজিদ বাসকর। ‘আশির বাদশা’কে একবার দেখার জন্য, তাঁকে একবার ছুঁয়ে দেখার জন্য মধ্যরাতেও বিমানবন্দরে ছিল জনপ্লাবন। প্রায় দু’যুগের বেশি সময় আগে এ রকমই এক মধ্যরাতে দমদম বিমানবন্দর থেকে ইরানে যাওয়ার বিমান ধরেছিলেন। সে দিনের বিমানবন্দর ছিল শুনশান। কাকপক্ষী টের পায়নি সে দিন। শহর ছেড়ে নীরবে-নিভৃতে চলে গিয়েছিলেন মজিদ।
তেহরান থেকে দোহা হয়ে দমদম বিমানবন্দরে রবিবার মধ্যরাতে যখন পৌঁছন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ১২ নম্বর জার্সিধারী, তখন অন্য ছবি দেখলেন ষাট অতিক্রম করা মজিদ। সাদা টি শার্ট, ঘিয়ে রংয়ের ট্রাউজার, আর মাথা ভর্তি সাদা চুলের মজিদকে দেখে লাল-হলুদ সমর্থকদের আবেগ আর বাঁধ মানেনি। ম-জি-দ, ম-জি-দ শব্দব্রহ্মে কেঁপে ওঠে মধ্যরাতের বিমানবন্দর।
বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষারত সমর্থকদের দেখে তাঁদের উদ্দেশে মজিদ মৃদু হাত নাড়েন। মুখে হাল্কা হাসি। তাতে বাঁধনহারা হন সমর্থকরা। রবিবার সকালে মজিদ বলছিলেন, ‘‘বিমানবন্দরে সাংঘাতিক ভিড় ছিল। আমার নাম ধরে সবাই ডাকছিল। এত ভিড় ছিল যে আমরা বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই পারছিলাম না। পুলিশ আমাদের যথেষ্ট নিরাপত্তা দিয়েছে। ওই ভিড় ঠেলে আমাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আমরা ফের বিমানবন্দরের ভিতরে ঢুকে পড়ি। তার পর অন্য একটা পথ দিয়ে আমাদের বিমানবন্দরের বাইরে আনা হয়। আজ সকালে হোটেলে এসে পৌঁছেছি।” ভোর পাঁচটা নাগাদ হোটেলে পৌঁছন মজিদ এবং তাঁর সঙ্গীরা।
একদিন তাঁর পা ময়দানে কত ফুলই না ফুটিয়েছে। খেলার শেষে তাঁর নামে জয়ধ্বনি উঠত। এত বছর পরে পুরনো শহরে ফিরে সেই পরিচিত শব্দ ফের শুনতে পেলেন। কেমন লাগছে কলকাতা? যেমনটা দেখে গিয়েছিলেন, এখনও কি ঠিক সে রকমটাই রয়েছে? মজিদ প্রথমে বললেন, “আগের মতোই তো রয়েছে দেখছি।’’ তার পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘দেখুন, আজ সকালে আমি হোটেলে ঢুকেছি। তার পর থেকে হোটেলবন্দি। বাইরে যাওয়া হয়নি। তাই কী ভাবে বলি আগের মতোই রয়েছে কি না শহর।’’
খুব অল্প সময়ের জন্য কলকাতায় এসেছেন বাদশা। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অনুষ্ঠান রয়েছে। সবক’টি অনুষ্ঠানেই তো উপস্থিত থাকতে হবে। আসবে তাঁর বাল্যবন্ধু জামশিদও। আর তাই শহরে পা রেখেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাদশা।