শাসক দলের চোখ রাঙানিতে না ডরে প্রকাশ্যে যোগী রাজ্যের বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। আর তার পরেই উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিল গোটা দেশ। যার ফলে শেষ পর্যন্ত উন্নাওয়ের বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে গ্রেফতারে বাধ্য হন যোগী। তবে অভিযোগকারী সেই তরুণীর গাড়িকে রবিবার পিষে দিল একটি ট্রাক। ওই ঘটনায় দু’জন মারা গেলেও মারাত্মক জখম হয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, মা, কাকিমা এবং আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহকে নিয়ে ওই তরুণী একটি মোটরগাড়ি চড়ে রায়বরেলী যাচ্ছিলেন ওই তরুণী। পুলিশ জানিয়েছে, রায়বরেলীর রাস্তায় উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাক মোটরগাড়িটিকে ধাক্কা মারে। আপাতত আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি ট্রমা সেন্টারে চিকিত্সা চলছে তাঁর। তিনি ছাড়াও গাড়ির আরও দুই আরোহী তাঁর মা, কাকিমা ও আইনজীবী মহেন্দ্র সিং গুরুতর আহত হন। পরে মা ও কাকিমার মৃত্যু হয়।
গুরুবক্সগঞ্জ থানার অফিসার রাকেশ সিংহ বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, ধাক্কা মারা ট্রাকটি খালি ছিল। ধাক্কা মারার পরে চালক ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায়। ট্রাকটিকে বাজেয়াপ্ত করে তার মালিকের খোঁজ করা হচ্ছে।’ আবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাক্ষীশেখর সিংহ জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে বেশ জোরে বৃষ্টি পড়ছিল। হতে পারে ভিজে রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি নিগৃহীতার গাড়িটিকে ধাক্কা মেরেছে।
তবে উন্নাওয়ের ওই ধর্ষিতার গাড়িকে ট্রাকের ধাক্কা মারার ঘটনায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তরুণীর পরিবারের লোকেরাও এ দিনের ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মেনে নিতে নারাজ। নিগৃহীতাকে প্রাণে মারার জন্য বিধায়কের দলবল এই কাজ করিয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
ডিজিপি ওপি সিং সোমবার জানিয়েছেন, ধর্ষিতার আত্মীয়রা ওই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চাইলে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এই দুর্ঘটনার তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেবে। বিরোধী নেতা অখিলেশ যাদবের অভিযোগ, বিধায়কের দলবলই মহিলাকে হত্যার চক্রান্ত করেছিলেন। তাই তিনিও সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন। তবে সিবিআই তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা।
এই ঘটনাকে শকিং বলে আখ্যা দিয়ে প্রিয়াঙ্কা টুইটে লিখেছেন, ‘উন্নাও ধর্ষিতার সড়ক দুর্ঘটনা চমকে দেওয়ার মতো। এই মামলার সিবিআই তদন্ত কতদূর পৌঁছল? অভিযুক্ত বিধায়ক এখনও বিজেপিতে কীভাবে আছেন? ধর্ষিতা ও সাক্ষীদের সুরক্ষায় গলদ কেন? এই প্রশ্নগুলির জবাব ছাড়া বিজেপির সরকারের থেকে কি ন্যায়বিচারের কোনও আশা করা যায়?’
উন্নাওয়ের ধর্ষিতার সঙ্গে সবসময় একজন বন্দুকধারী ও দুজন মহিলা পুলিশকর্মীর থাকার কথা। দুর্ঘটনার সময় তাঁরা কেন ছিলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রিয়াঙ্কা। যদিও উত্তরপ্রদেশের ডিজিপি-র দাবি, গাড়িতে জায়গা কম থাকায় নিগৃহীতা নিজেই তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীদের রায়বরেলির পথে তাঁর সঙ্গে যেতে বারণ করেছিলেন। তাঁর সুরক্ষায় নিযুক্ত করা হয়েছিল ১০ নিরাপত্তা কর্মীকে। ৭ জনের তাঁর বাড়িতে পাহারা দেওয়ার কথা। আর ৩ জনের সবসময় তাঁর সঙ্গে থাকার কথা।
উল্লেখ্য, গত বছর দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল উন্নাও গণধর্ষণ কাণ্ড। ২০১৭-য় বিধায়কের কাছে চাকরি চাইতে গিয়ে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন ওই তরুণী। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬। বিধায়ক সেঙ্গারের বিচার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পাশাপাশি উন্নাওয়ের ধর্ষণ জাতীয় রাজনীতিতে আলোড়ন তোলে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন তিনি। নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
তাঁর অভিযোগ ছিল, ২০১৭ সালে চাকরির জন্য বিজেপি বিধায়ক কুলদ্বীপ সেঙ্গারের বাড়িতে গেলে সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। এবং তাঁর বাবাকে পুলিশ আটক করার পর কুলদ্বীপ সেঙ্গারের বেধড়ক মারে তাঁর মৃত্যু হয়। কিছুদিন পর কুলদ্বীপ ও তাঁর ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। অবশেষে সিবিআই তদন্তের পর সেঙ্গারকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় সরকার। সিবিআই আদালতকে জানায়, ২০১৭-এর ৪ জুন রাতে বিধায়ক সেঙ্গার সত্যিই ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছিলেন। বিধায়ক ও তাঁর ছেলে এখনও জেলে রয়েছেন।