দুই বাংলার মধ্যে যে সুমধুর সম্পর্ক আছে তা বারবার উঠে এসেছে নানা ক্ষেত্রে। আর দুই বাংলার একটি সাধারণ সখ্যতার জায়গা আছে। দুই বাংলার মানুষই ভোজনরসিক। আর তা যদি হয় মাছের ব্যাপার সেখানে তো একবাক্যে বাঙালি এগিয়ে থাকেন। বর্ষাকাল নিয়ে আসে বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশকে। আর সেই স্বাদে মাতে গোটা বিশ্ব। দু’দেশেই ইলিশ নিয়ে পাগলামি থাকলেও রান্নায় অনেক ফারাক। আর সেই ফারাক দেখাতেই ঢাকা থেকে তাঁরা নিয়ে এসেছেন রাষ্ট্রীয় অতিথিশালার দুই খাস পাচক
জামাল হোসেন আর আব্দুল হালিমকে। কলকাতার কাছে একটি রিসর্টে এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিল শুধু ইলিশ ঘেরা।
তাঁদের হাতের স্বাদে মুগ্ধ হয়েছেন জাপানের কনসাল জেনারেল মাসাউকি তাগা থেকে শুরু করে ব্রিটিশ ডেপুটি হাই-কমিশনার ব্রুস বাকনেল। মাসাউকি তাগা তো বলেই বসলেন, ‘একটা মাছকে নিয়ে বাঙালির এই আবেগ, আর কোথাও দেখিনি!’ ইলিশের স্বাদে আপ্লুত হয়ে ব্রিটিশ ডেপুটি হাই-কমিশনার জানালেন, ‘রিয়েলি ইট্স অ্যামেজ়িং!’ অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনার তৌফিক হাসান। সব জায়গার ইলিশের থেকে বাংলার ইলিশের কি পার্থক্য সেটাই সাহেবদের বোঝাতে হয় তাঁকে। তাঁর কথায়, ইলিশ হয়তো অনেক জায়গাতেই মেলে। কিন্তু লোকে বলে, বাংলাদেশের চাঁদপুরে তার ‘বাড়ি’। চাঁদপুর থেকে ভোলা পর্যন্ত এলাকায় যে মান ও মাপের ইলিশ পাওয়া যায়, তেমনটি আর কোথাও মেলে না। রূপনারায়ণের ইলিশ রূপোলি সাদা আর চাঁদপুরের ইলিশের পিঠে লম্বালম্বি লাল দাগ। এমনকি দুই ইলিশ হাতে নিয়ে পার্থক্য দেখিয়ে জানান, বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা জলের ওপর থেকে এই লাল দাগ দেখেই ইলিশের ঝাঁক বোঝেন।
এই অনুষ্ঠানে যেমন ছিল ‘স্মোক্ড হিলসা’ তেমনই ছিল ইলিশ বিরিয়ানি। এ ছাড়া ভর্তা, স্যালাড, দোপেঁয়াজা, ল্যাজের টক-এর মতো এমন কিছু পদ এ দিন তাঁরা রাঁধলেন, এ বাংলায় যা খুবই অপরিচিত। টক্করে কলকাতার শেফ নিতাইচন্দ্র বারিক পেশ করেন কাঁটাছাড়া মাখন-ইলিশ, ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাকের ঘণ্ট, ভাপা ইলিশ। বাংলাদেশের আর এক কূটনীতিক শামসুল আরিফ বলছিলেন, ইলিশকে আঁকড়ে রাখার সরকারি প্রয়াসের কথা। ইলিশ নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের এই ঐক্য প্রদর্শনীর অন্যতম আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশের উপ-দূতাবাসের পাশে ছিল ভারত সরকারের বিদেশ ও পর্যটন মন্ত্রকও।