২০ বছর আগে সতপাল সিং ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান। কার্গিল যুদ্ধে উপত্যকার টাইগার হিলে তখন পাক সেনার আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন সতপাল। সেই সময় তাঁর বীরত্বের জন্যই খতম হয় পাক সেনার ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান সহ নর্দার্ন লাইট ইনফ্যানট্রি বাহিনীর চারজন। যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য শের খানকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বীরত্ব সম্মান নিশান–এ–হায়দার পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। আর সতপাল সিং পেয়েছিলেন বীরত্বের জন্য বীর চক্র। সেদিনের জওয়ান আজ ৪৬ বছরের পুলিশ কনস্টেবল।
তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া সতপালের বীরত্বের জন্য তাঁর নাম পরমবীর চক্রের জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু সতপালকে বীর চক্র সম্মান দেয় ভারত সরকার। ২০০৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন সতপাল। সেই বছরই পাঞ্জাব পুলিশে যোগ দেন। কিছুটা আক্ষেপের সুরেই সতপাল বলেছেন, ‘আমি হয়ত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বীর চক্রের জন্য কোনও যোগ্য সম্মান আমি পাইনি। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী কোটায় পুলিশের চাকরি পাই। এখন আমি হেড কনস্টেবল। ক্রীড়াক্ষেত্রে যাঁরা মেডেল পান, তাঁরাও উঁচু র্যাঙ্ক পান সেনায়। আমি এমন একজনকে মেরেছি যে কিনা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সেনা সম্মান পেয়েছে। যাই হোক বেঁচে আছি। এই অনেক। শুধু খারাপ লাগে আমার বেকার শিক্ষিত ছেলের জন্য। স্নাতকোত্তর অবধি পড়েও চাকরি জোটেনি। বীরত্বের জন্য পুরষ্কার পেয়েছেন। কিন্তু যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি হয়নি সতপালের!
পাঞ্জাবের সাংগ্রুর জেলার ছোট্ট শহর ভবানীগড়। এখন সেখানেই ব্যস্ত সড়কে ট্রাফিক সামলান হেড কনস্টেবল সতপাল সিং। কিন্তু আর পাঁচজন ট্রাফিক পুলিশের থেকে তিনি আলাদা। যা তাঁর পোশাক দেখলেই বোঝা যাবে। তাঁর উর্দির বাঁ দিকের বুকের কাছে মেডেল রিব্যান্ড। সেখানেই জ্বলজ্বল করছে বীর চক্র। বছর কুড়ি আগে কার্গিল যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের জন্য পুরষ্কার স্বরূপ বীর চক্র পেয়েছিলেন সতপাল সিং।
যুদ্ধের স্মৃতি বলতে গিয়ে আবেগে ভাসেন সতপাল। বলেন, ‘আমাদের গ্রুপ তখন পাক সেনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল। আমাদের ধ্বনি ‘জো বোলে সো নিহাল, সত শ্রী অকাল’ তুলে আমরা আক্রমণ প্রতিহত করি। প্রথমে আমি মেশিন গান থেকে চারটি গুলি ছুঁড়ি। কিন্তু ওরা কাছে এসে গিয়েছিল। তখন হাতাহাতি হচ্ছিল। মেশিন গানের বাট দিয়ে এরপর আমি একজন লম্বা, ট্রাকস্যুট পড়া সেনার মাথায় আঘাত করি। মুহূর্তের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। তখনও জানতাম না নিহত ব্যক্তি ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান। পরে রেডিও অপারেটরের মাধ্যমে তার পরিচয় জানি।’