মোদী সরকারের আমলে ধাপে ধাপে নিজেদের সব ছাপাখানা গুটিয়ে আনার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রেল। সারা দেশে রেলের ১৪টি ছাপাখানার মধ্যে গত বছর ন’টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে বাকি পাঁচটি বড় ছাপাখানা (মুম্বই, হাওড়া, দিল্লী, চেন্নাই ও সেকেন্দ্রাবাদ)-ও বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। মোদী সরকারের এ হেন তুঘলকি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবার অনশন-আন্দোলনে নামলেন হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন প্রিন্টিং প্রেসের কর্মীরা। গতকাল প্রিন্টিং প্রেস প্রাঙ্গণে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত ধর্না ও অনশন কর্মসূচী পালিত হয়। এর পর শ্রমিক-কর্মচারীরা গোলমোহর ময়দানে একটি প্রতিবাদ সভাও করেন। সোমবার ওই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন কর্মীদের পরিবারের সদস্যরাও।
বিক্ষোভকারী কর্মচারীদের অভিযোগ, দেশের ৫টি প্রিন্টিং প্রেসই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। সম্প্রতি কেন্দ্রের বাজেটে এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছে। এ কথা শুনেই লাগাতার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেন প্রিন্টিং প্রেসের কর্মীরা। উল্লেখ্য, রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশেই বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে ওই পাঁচটি ছাপাখানাও বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনকী বিক্রি করে দেওয়া হবে ছাপাখানার বহু কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। জানা গেছে, পাঁচটি ছাপাখানায় প্রায় দু’হাজার কর্মী আছেন। এর মধ্যে পূর্ব রেলে হাওড়ার ছাপাখানায় আছেন ৫১১ জন কর্মী।
ওই ছাপাখানায় পূর্ব রেলের ৫০ কোটির বেশি অসংরক্ষিত টিকিট ছাপা হয়। এ ছাড়াও কয়েকশো ছোট মাপের স্টেশনের পিসিটি বা পেপার কার্ড টিকিট, রিজার্ভেশন ফর্ম, রেলের বিভিন্ন বিভাগীয় কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্ম, খাতা এবং ‘মানি-ভ্যালু’ (টাকার মূল্য বহন করে, এমন ছাপানো কাগজ) ছাপা হয়। রেলের কাউন্টার থেকে যে-সব সংরক্ষিত টিকিট বিক্রি হয়, ছাপা হয় তা-ও। প্রায় সব ক’টি ছাপাখানাতেই বছর কয়েক আগে বিপুল ব্যয় করে আধুনিকীকরণ হয়েছে। হাওড়ার ছাপাখানায় বছর চারেক আগে প্রায় ২১ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক যন্ত্রও বসানো হয়।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, রেলে বেসরকারীকরণ করতেই এই উদ্যোগ। অথচ এখনও প্রিন্টিং প্রেসগুলিতে নিয়মিত কাজ হয়। রেলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফর্ম এখনও এখান থেকে ছাপা হয়। কার্ড পাঞ্চ করা টিকিটও এখান থেকে ছাপা হয়। অনেক স্টেশনে এখনও ওই টিকিট ব্যবহৃত হয়। পূর্ব রেল ছাড়াও রেলের অন্য জোনের কাজও এখান থেকে হয়ে থাকে। প্রতিদিনই কার্যত কর্মযজ্ঞ চলে ছাপাখানাগুলিতে। সম্প্রতি এখানে আধুনিক মানের ছাপার মেশিন বসানো হয়েছিল। বিল্ডিং সংস্কার করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও স্রেফ বেসরকারীকরণের উদ্দেশ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে পূর্ব রেলের বহু পুরনো এই ছাপাখানা। সেইসঙ্গে বন্ধ হচ্ছে রেলের সবকটি ছাপাখানাই। আসলে প্রথম সারির ওই প্রিন্টিং প্রেসকে যে এত দ্রুত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কর্মীদের কেউই তা ভাবতে পারেননি।