প্রথম মোদী সরকারের আমল্র বারবারই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়েছে এ রাজ্য। সেই ধারা বজায় রয়েছে মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসেও। তাদের পেশ করা প্রথম সাধারণ বাজেটে বাংলা সেই ‘ছাগলের তৃতীয় সন্তান’ হয়েই রয়ে গেছে। বাজেটে বাংলার জন্য কোনও বিশেষ প্রকল্পের ঘোষণা তো হয়ইনি, বরং রাজ্যের বেশ কিছু চলতি প্রকল্পে বরাদ্দ শুন্য করে দেওয়া হয়েছে। এমনকী সাধারণ বাজেটের মতো রেল বাজেটেও বাংলায় ‘বঞ্চনা এক্সপ্রেস’ ছুটিয়েছে মোদী সরকার। এ নিয়েই এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা মতো দিল্লীতে সরব হবে তৃণমূল।
এখন থেকে প্রায় প্রতিদিন কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলার প্রকল্পগুলি নিয়ে মোদী সরকারের মনোভাব জেনে নেবে বলেই ঠিক করেছে তৃণমূল। আর সেটি জানার পরেই রাজ্যের প্রকল্পকে সামনে রেখে বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করবে। সেই মতো রাজ্যের নাম পরিবর্তন থেকে শুরু করে রেল, বিদ্যুৎ, জল, কয়লার মতো বাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের গতিবিধি নিয়ে মোদী সরকারকে চেপে ধরা শুরু করলেন দলের সাংসদরা। যেমন রাজ্যের নাম পরিবর্তনের ইস্যুতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে জবাব চাইবে বলেই ঠিক করেছে তৃণমূল।
মমতার পরিকল্পনা মতোই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চেয়ে সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চাওয়া হয়েছে সাক্ষাতের সময়। রাজ্য বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরেও কেন তার অনুমোদন দিচ্ছে না কেন্দ্র? তা এবার মোদীর মুখ থেকেই শুনতে চায় বাংলার শাসক দল। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে যৌথ চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের লোকসভা ও রাজ্যসভার দলনেতা দ্বয় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন।
অন্যদিকে, কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকরের সঙ্গে দেখা করার পর কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশির কাছেও দরবার করেছে তৃণমূল। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লীতে এসে সংসদেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরেও কেন সরকারিভাবে বীরভূমের ডিপিএইচডি (দেওচা-পাঁচামি-হরিণসিং-দেওয়ানগঞ্জ) কয়লা ব্লকের বরাত এখনও মিলল না? কেন তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বিষয়টি আটকে রয়েছে? মন্ত্রীর কাছে জানতে চান দলের প্রতিনিধি দল।
সংসদ ভবনে কয়লামন্ত্রীর কক্ষে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চেপে ধরেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, ডাঃ মানসরঞ্জন ভুঁইয়া, রাজ্যের প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মণীশ গুপ্ত-সহ দলের একাধিক সাংসদ। তাঁরা এ ব্যাপারে সরব হতেই কেন্দ্রও বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ বাড়িয়েছে বলে দাবি করে বৈঠকের পর তৃণমূলের প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, মন্ত্রী বলেছেন আগামী শুক্রবার এ ব্যাপারে রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি হবে। চুক্তির পর কাজ শুরু হলে ১২.৩১ বর্গ কিলোমিটার এলাকার এই কয়লা ব্লক ঘিরে বহু কর্মসংস্থান হবে।
তৃণমূলের তরফে এ-ও জানান হয়েছে যে, কেন্দ্রের বরাত মিললেই পশ্চিমবঙ্গ পাওয়ার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড কাজ শুরু করবে। তারাই খনি থেকে কয়লা তুলবে। কেন্দ্র পাবে মেট্রিক টন পিছু ৪০০ টাকা কোল সেস। অন্যদিকে, কয়লামন্ত্রীকে যেভাবে চেপে ধরা হয়েছে, একইভাবে আজ রাজ্যের রেল প্রকল্প নিয়ে সরব হবে বলে ঠিক করেছে তৃণমূল। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে মোদী সরকারের কী ভাবনা রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে তাঁর মুখ থেকেই তা স্পষ্ট জানতে চায় ঘাসফুল শিবির।