সহানুভূতি বিন্দুমাত্র লক্ষণ নেই। সমস্যা সমাধানের রাস্তায় হাঁটার কোনও চেষ্টাও নেই। উল্টে দেশজোড়া কৃষক বিক্ষোভকে “রাজনৈতিক অভিন্ধিমূলক” বলে দাগিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত।
আসানসোলের সাংবাদিক বৈঠকে শেখাওয়াতের মোদ্দা চেষ্টাই ছিল নরেন্দ্র মোদী সরকারের কৃষিনীতি যে কতটা কার্যকরী তাই প্রমাণ করা। তবে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনাগুলি সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে পারেননি কৃষি প্রতিমন্ত্রী। সিবলেছেন, “কিছু কৃষক তো মারাই গিয়েছেন, তবে এটা গোটা দেশের চিত্র নয়।”
তাঁর দাবি, সবজি উৎপাদনে ভারত বিশ্বের এক নম্বরে আছে। কৃষি উৎপাদনও বাড়ছে।
কিন্তু কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দাবি মোটেই সমর্থন করছে না ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে ভারতীয় কৃষি অর্থনীতির এক নজিরবিহীন বেহাল চেহারা ধরা পড়েছে। রিপোর্ট বলছে, গত তিন বছরে ভারতের কৃষিপণ্যের রফতানি হ্রাস পেয়েছে ২১ শতাংশ এবং কৃষিপণ্যের আমদানি বেড়েছে ৬০ শতাংশ। ভারতীয় অর্থনীতির সবচেয়ে অগ্রাধিকার ক্ষেত্র কৃষিতে বৃদ্ধির হার কমতে কমতে ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে মাত্র এক শতাংশে এসে পৌঁছেছে। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করে কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের নূন্যতম সহায়ক মূল্য ধার্য করলে যে কিছুটা হলেও কৃষক আত্মহত্যা কমানো যেত, তাও মানতে নারাজ মোদী সরকার। কৃষকদের ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করতে রাজি নন মোদীর মন্ত্রীরা। অথচ গত ৩৬ মাসে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি কর্পোরেটদের ব্যাঙ্কঋণ, যা কিনা অনুৎপাদক সম্পদ হিসাবে ব্যাঙ্কের খাতায় লেখা ছিল, সেই ৩১ হাজার কোটি টাকা স্রেফ হিসাব থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। জনগণের টাকা কর্পোরেট জালিয়াতরা চুরি করলে মোদী সরকার হিসাবের বাটপারি করে তাঁদের ছাড় দিয়ে দেন, অথচ ফসলের দাম না পেয়ে কৃষক ব্যাঙ্কঋণ শোধ করতে না পারলে তাঁর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে দেন।
কৃষকদের পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্কঋণ মকুব করতে নাকি নাভিশ্বাস উঠছে নরেন্দ্র মোদির অথচ বিজেপি সরকারের সাফল্য প্রচারের জন্য সাড়ে,চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে তাঁর বিবেকে বাধছে না। তাই কৃষকদের ন্যায্য ক্ষোভকে অভিসন্ধি বলতে বাধছে না মোদী সরকারের কৃষি মন্ত্রীর।
এঁরাতো কেবল জনগণের দাবিকেই উপেক্ষা করেন না, খোদ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া শ্লোগানকেও উপেক্ষা করেন। প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারতের শ্লোগানকে উপেক্ষা করেই সম্প্রতি বিহার সফরে কনভয় থামিয়ে একটি দেওয়ালের পাশে মুত্রত্যাগ করতে দেখা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংকে। সেই কৃষি মন্ত্রী কে দিয়ে কি ভারতের কৃষি সমস্যা দূর করা যাবে?