অবশেষে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে গেল মোদীর ‘এনআরসি’ নীতি। বিজেপি শাসিত আসামে মোদীর এই নীতি নিয়ে উত্তাল হয়েছিল। কার্গিল যুদ্ধের জওয়ানকেই ‘বিদেশি’ চিহ্নিত করে জেলে পাঠানো হয়েছিল মহম্মদ সানাউল্লাহকে। সেই মামলায় কিছুটা স্বস্তি পেলেন এই জওয়ান। জামিন দেওয়া হল তাঁকে। শুক্রবার শুনানির পর তাঁর জামিন মঞ্জুর করে গুয়াহাটি হাইকোর্ট৷ পাশাপাশি এই বিষয়ে কেন্দ্র ও অসম সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ গত মাসে বিদেশি তকমা দিয়ে ভারতীয় সেনার এই প্রাক্তন কর্মীকে গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল৷
সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ১৯৮৭ সালে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। ৩০ বছর সেনাবাহিনীতে থাকার পরে ২০১৭ সালে অবসর নেন৷ এরপর এএসআই হিসেবে সীমান্ত শাখায় যোগ দেন। তার সব তথ্যপ্রমাণই জমা দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীতেও পুলিশে যোগ দেওয়ার সময়ে তাঁর নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়। তবে বিচারক জানান, শুনানির সময় সানাউল্লাহ ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানের কথা বলেছিলেন৷ তাই ভুল তথ্য দেওয়ার অপরাধেই তাঁকে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যমনস্কতায় সানাউল্লাহ ভুল তথ্য দিয়ে ফেলেছেন বলেই দাবি অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার আজমল হকের৷ তাঁর অভিযোগ, আদালত জোর করে দেশের জন্য কাজ করা এক প্রাক্তন সেনাকর্মী ও রাজ্য পুলিশের এএসআইকে ‘বিদেশি’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে৷ আপাতত তাঁকে গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সানাউল্লাহর পরিজনেরা৷ তারপরই সানাউল্লাহকে জামিনের সিদ্ধান্ত নেন আদালত।
প্রসঙ্গত, আদালত ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করলেও ভোটার তালিকা ঢেলে সাজার গাফিলতিতে অনেকের নামের আগেই ‘ডি’ থেকে গিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ডি-ভোটারদের নাম এনআরসিতে ঢুকবে না। এনআরসির বাইরে থাকবেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও। তাই ভারতীয় প্রমাণ হয়েও ভোটার তালিকার ভুলে অনেকের নাম এনআরসির খসড়া থেকে বাদ পড়েছিল। আজ বিজেপির এনআরসি ইস্যুতে মাশুল দিতে হল দেশের সেনাকেই।
নির্বাচনী প্রচারে অধিকাংশ বিজেপি নেতৃত্বের মুখে উঠে এসেছে দেশপ্রেম। ইস্যু হয়েছিল ‘সেনা’। ‘সেনা’ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাল হয়েছিল দেশ। রাজনৈতিক মহলের এক বড় অংশের মতে এই ইস্যুর জোরেই দ্বিতীয় বারের জন্য দিল্লীর মসনদে ফিরেছে মোদী সরকার। কিন্তু এটা কি ছিল শুধুই বিজেপির ভোটে জেতার জন্য এক কৌশল? প্রশ্ন জাগছে ভোট পরবর্তী গেরুয়া শিবিরের কর্মকান্ডে। কারণ বিজেপি-শাসিত অসমে, কারগিল যুদ্ধে দেশের হয়ে লড়াই করা এক প্রাক্তন লেফটেন্যান্টকেই বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে জেলে পাঠানো হয়েছিল।