বাবার নামের গেরোয় বিপাকে ছেলে। আর তার জেরে দু’বছর ধরে আসামের ডিনেশন ক্যাম্পে বন্দি কলকাতার বাসিন্দা।
পার্ক সার্কাসের চমরু খানসামা লেনের যুবকের ঠিকানা এখন অসমের গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্প। সামনেই খুশির ইদ। তবে আনন্দ এখন অলীক কল্পনা শেখ আসগরের পরিবারে। স্বামীর জন্য অপেক্ষায় স্ত্রী। অপেক্ষায় ভাই-বোনরাও। কবে পরিজন ছাড়া পাবে কিছুই জানেন না তাঁরা।
চমরু খানসামা লেনের একচিলতে ঘরের বাসিন্দা শেখ আসগর নিজেকে দেশের নাগরিক হিসাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে ভিনরাজ্যে গিয়ে এখন ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী তিনি। তার মূল কারণ তাঁর বাবার নামের বিভ্রান্তি।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকরণ বা এনআরসি তালিকায় নাম ওঠেনি আসগরের। গত বছর আসামে এনআরসি চালু হওয়ার পর প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছিল সেই তালিকা থেকে। বঙ্গে এনআরসি চালু হয়নি এখনও। তবে লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে বারবারই বাংলায় এনআরসি চালু করার হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। বাংলায় এনআরসি চালু হওয়ার আগেই অবশ্য ‘বিদেশি’ হয়ে গিয়েছেন আসগর। কলকাতার ভোটার হলেও কাঠের কাজের সুবাদে দীর্ঘদিন আসামে রয়েছেন তিনি। তা হলে কেন তাঁকে আটক করা হল?
আসগরের ভাই আরশাদ জানিয়েছেন, তাঁদের বাবার নাম ছিল মহম্মদ জরিফ। কিন্তু তাঁর ডাক নাম মোড়ল হওয়ায় ভোটাল তালিকায় বাবার নাম ভুলবশত হয়ে যায় মহম্মদ মোড়ল। পরে আদালতে এফিডেভিট করে বাবার নাম পরিবর্তন করে সরকারিভাবে মহম্মদ জরিফ করা হয়। কিন্তু আসামে নাগরিকপঞ্জির সময় নথিতে সমস্যা দেখা দেয়। আসগর বাবার যে ভোটার কার্ডের প্রতিলিপি জমা দেয় তাতে মহম্মদ মোড়ল লেখা ছিল। সেই সংক্রান্ত হলফনামা জমা দিলেও তা গ্রহণ করেনি আসামের আদালত। তখন আসগরের ঠাঁই হয় গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে।
দু’বছর ধরে ওই ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী রয়েছেন আসগর। পরিবার, স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে চেয়েও মুক্তি মেলেনি। আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আসগর ও তাঁর পরিবারকে এই আইনি লড়াইয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। এখন মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছেন পার্ক সার্কাসের শেখ আসগর।