আজ, রবিবার ষষ্ঠ দফার নির্বাচন চলছে বাংলার ৮ কেন্দ্রে। তবে এদিনও রাজ্যের দিকে দিকে চলছে গেরুয়া সন্ত্রাস। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েও এড়ানো যায়নি বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হিংসার ঘটনা। এ নিয়েই এবার বিজেপির ওপর ক্ষোভ উগরে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বারুইপুরের নির্বাচনী সভা মোদী সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেন তিনি বলেন, ‘২০১৬-তেও এভাবে একই ছবি দেখেছি। কম জ্বালায়নি মোদী সরকার। এভাবে গায়ের জোরে হয়?’
কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে বাংলায় বিজেপি গুন্ডামি করছে বলেও এদিন অভিযোগ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে অত্যাচার করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অনেক জায়গায় মারধর করেছে ওরা। আইন শৃঙ্খলা কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিষয়ই নয়। রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারে পড়ে ওটা। তা সত্ত্বেও বেআইনি ভাবে সারাদিন ছেলে-মেয়ে, এমনকি সাংবাদিকদের পিটিযেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সব নরেন্দ্র মোদীর কথায়। ধিক্কার জানাই ওদের।’
এরপরই বিজেপির উদ্দেশ্যে মমতার কটাক্ষ, ‘ওরা ভাবছে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে ভোট করিয়ে দিয়ে যাবে। মানুষের ভোটগুলো কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে দেবে। কিন্তু ওরা ভাবতে পারে না, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বন্দুকের আঘাতে বাংলার মানুষের মাথা নত করা যায় না। এই টুকু বুদ্ধি ওদের নেই।’ শুধু তাই নয়। তিনি অভিযোগ করেন, ‘নোটবন্দীর টাকায় ভোট করছে বিজেপি। নোট বাতিলের টাকা কোথায় গেল জিজ্ঞাসা করুন। কালো টাকা কোথায় গেল? এই সরকার ক্ষমতায় এলে দেখবেন এবার ব্যাঙ্কও বাতিল করে দেবে বিজেপি।’
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন যে, ‘ইতিহাস তো বাতিল করতে শুরু করেছে। এ বার স্কুলও বাতিল করে দেবে। মুঘলসরাই স্টেশন থেকে তাজমহল সব নাম বদলাতে শুরু করেছে। মহাত্মা গান্ধীর জায়গায় নাথুরাম গডসে এসেছে। কী না করেছে এরা? আজ এসে বলছে ভোট দাও। কেন ভোট দেবেন?’ তিনি এ কথাও জানান যে, ‘কত কষ্ট করে, ভিক্ষা করে নির্বাচন করি আমরা। বিজেপির মতো কোটি কোটি টাকা নেই আমাদের।’
এরপরই মোদীকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী ইস্তাহার তো প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু তার একটা প্রতিশ্রুতিও কি পূরণ করতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদী? পাঁচ বছরে বিজেপি কোন কাজটা করেছে? নরেন্দ্র মোদীকে বললাম আপনার সঙ্গে একদিন বিতর্ক হোক আপনার। চ্যানেলও আপনিই ঠিক করুন। তবে টেলিপ্রম্পটার রাখা চলবে না। তো আসুন না! বাংলায় এসে বলেন এ খানে নাকি উন্নয়ন হয়নি। বলি ওঁর চোখে কি ন্যাবা হয়েছে!’
কমিশনকেও আজ একহাত নিয়েছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ‘রাজ্যে নির্বাচিত সরকার রয়েছে, তার সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা রয়েছে, সব বাদ দিয়ে বিশেষ পর্যবেক্ষক নামিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাও ঠিক আছে, কিন্তু সেই পর্যবেক্ষক বিজেপির কথায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে বিজেপিকে ভোট দিতে বলাচ্ছেন। লোকের ঘরে ঢুকে মারধর করছে। এটা বেআইনি। বুথের সামনে দাঁড়াতে বলা হয়েছে দাঁড়িয়ে থাকবেন, গুলি করার, লাঠি তোলার অধিকার নেই তোমার। এর আগে হাওড়ার একটি বুথে গিয়ে গুলি চালিয়েছিল। আজও গুলি চালিয়েছে।’
এরপরই তৃণমূল নেত্রী সাফ জানিয়ে দেন যে, ‘এবারের মতো বীভৎস নির্বাচন দেখিনি আমি।’ তাঁর কথায়, ‘সাত দফায় তিন মাস ধরে নির্বাচন হওয়ার মানে টানা সব কাজ বন্ধ। কত কাজ নষ্ট হয়ে গেল। এর খেসারত কে দেবে? দেড় মাস ধরে এই গরমে ভোট চলছে। এত দিন ধরে কখনও নির্বাচন হয়?’