ক্ষমতায় এসে গোটা বাংলাকে উন্নয়নের আলোতে আলোকিত করে তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সেই উন্নয়নই হাতিয়ার হয়ে উঠছে তৃণমূলের। উন্নয়নের আলো গিয়ে পড়েছে ঝাড়গ্রাম জেলাতেও। স্থানীয় বাসিন্দারা আপ্লুত এলাকার নতুন চেহারা দেখে।
উড়িষ্যা আর ঝাড়খণ্ড রাজ্য লাগোয়া বাংলার সীমান্তে ঝাড়গ্রাম আজ আলাদা জেলা। একদিকে পাহাড়, ঝর্না, পার্বত্য ভূমি। অন্যদিকে সুবর্ণরেখা, কংসাবতী, ডুলুংয়ের জলধারা এর বিস্তীর্ণ এলাকাকে শস্যশ্যামলা করে তুলেছে। বৈচিত্র্যপূর্ণ লোকসংস্কৃতির পীঠস্থান জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রাম সংরক্ষিত লোকসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, গড়বেতা, শালবনি ও বান্দোয়ান বিধানসভা। সাতটি বিধানসভাই তৃণমূলের দখলে। শাল–সেগুনের সবুজে ঘেরা এই শহর গত ২০১৭–র ৪ এপ্রিল নতুন জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তার পর গড়ে উঠছে সম্পূর্ণ নতুন পরিকাঠামো।
সুবর্ণরেখার তীরে কয়েকজন মৎস্যজীবী নদীর জলে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন। এপার থেকে বিস্তীর্ণ নদীর ওপর দিয়ে ওপারের ভসরা গ্রামে গিয়ে মিশেছে দীর্ঘ সেতু। ভারী সুন্দর নাম তার ‘জঙ্গল কন্যা’! মৎস্য শিকারিদের এক দু’জন জাল কাঁধে, মাছের টোকা নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। নদীর পাড়ে গাছের নিচে ছাওয়ায় তাঁদের সঙ্গে দেখা। সেতুর কথা পাড়তেই মুখের কথা কেড়ে নিয়ে একজন বলে উঠলেন, ‘আমাদের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষের উপকার হয়েছে। এখন নয়াগ্রাম থেকে সরাসরি দিঘা, কলকাতা–সহ নানান জায়গায় বাসে যাওয়া যায়। এখানকার ফসল পাঠানো যায়। আগে কোনও রোগী থাকলে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হত। এখন দিদির দৌলতে দূর কাছে হয়ে গেছে।’
এই সেতুই নয়াগ্রামের অনেকটা অর্থনৈতিক চালচিত্র বদলে দিয়েছে। এরকমই লালগড়কে ঝাড়গ্রামের কাছে এনেছে আমকলা সেতু। শুধু সেতু নয় এরকমই ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহলে মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, কলেজ, পলিটেকনিক, সুন্দর পিচঢালা রাস্তা, পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে ভারী খুশি সকলে। ঝাড়গ্রাম জেলা হিসেবে গড়ে ওঠার পর নতুন পরিকাঠামো তৈরি হওয়ার ফলে শুধু এ জেলা নয় চিকিৎসা, পড়াশোনা–সহ নানান সুযোগ–সুবিধা আরও বেশি করে পাচ্ছেন জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্যের মানুষজনও। তাঁরা এ জেলার উন্নয়ন দেখে অবাক হন। ঢোঁক গিলে হলেও মেনে নেন বিরোধী কর্মী, সমর্থকরা।
ভোটের প্রচারে গিয়ে তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা সোরেন (টুডু) মানুষের উদ্দেশে বলছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে আপনাদের জন্য পাঠিয়েছেন। আপনারা দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করুন যাতে আপনাদের সেবা করতে পারি।’ ২০১৪–র লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এবার সেই ব্যবধান আরও বাড়তে ভোট–ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা। সারা এলাকা ঘুরে যা দেখা যায় তাতে প্রচারে, প্রভাবে তৃণমূল অনেক এগিয়ে। পরপর সভা করে গেছেন মমতা ব্যানার্জি, পার্থ চ্যাটার্জি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ জেলা তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রসূন ষড়ঙ্গী বললেন, ‘জঙ্গলমহলে রাস্তা, স্কুল, কলেজ–সহ নানা ধরনের উন্নয়নের সাক্ষী আমজনতা। এই উন্নয়নের জোরেই গতবারের তুলনায় এবার আমাদের প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বাড়বে।’