কমরেড ডাক্তারবাবু,
কেমন আছেন এখন? আপনার ব্যাংক, ফেসবুক, টুইটারের পাসওয়ার্ড নিশ্চয়ই সুরক্ষিত আছে এখন। বদলে নিয়েছেন তো? কে টুইটার ব্যবহার করেছিল ধরতে পেরেছেন?
![সূর্যকান্ত মিশ্রকে খোলা চিঠি---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 3 59345400 2441211852602006 2395437465822298112 n](https://ekhonkhobor.com/wp-content/uploads/2019/04/59345400_2441211852602006_2395437465822298112_n.jpg)
আমি চিন্তিত হয়ে পরেছি এই কারণে যে আগামী দিনের তেল হচ্ছে ডেটা আর ওই বন্দুকের নলটা বদলে ডিজিটাল পৃথিবী হয়ে গেছে ক্ষমতার উৎস। সেখানে দেখলাম আপনার একাউন্ট থেকে একটা পচাগলা মানসিকতার গা ঘিনঘিনে Classist টুইট করা হয়েছে। “র’ সাইলেন্ট রাখার বদ অভ্যেস নিয়ে খিল্লি ও করেছেন। পড়তে পড়তে হাসি ও পেলো যখন ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে আপনি কটাক্ষ করেছেন দেখলাম। ঠিকই, ইংরেজি শেখাটা ভীষণ দরকার। সাহেবদের মতো না হলে ও ঝড়ঝড়ে ইংরেজিতে কথা বলাটা। তাই বদলে যাওয়া অবস্থায় যারা রাজ্যের স্কুলগুলো থেকে ইংরেজি তুলে দিয়ে “মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ” র মাজাকি করেছিল তাদের কলেজস্ট্রিটের মোড়ে নিয়ে গিয়ে নাকখত দেওয়ানো উচিৎ।
দেবলীনা হেমব্রম আগুন ঝড়ানো বক্তৃতা দিয়েছিল ব্রিগেডে। কী জানি হয়তো সাংসদ হয়ে রাষ্ট্রসংঘে যাবে একদিন। পিসি মিটিং এ বলে দেবেন, ওখানে চোস্ত ইংরেজিতে না বললে ও চলবে কারণ ওর মাতৃভাষা বাংলা পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। লাইভ অনুবাদন করা হয়। ভুল ইংরেজিতে কথা বললে লোকে হাসবে না। কারণ স্প্যানিশ আর ফ্রেঞ্চ ও পৃথিবীর অনেকে বলে।
কলেজের একাধিক দাদাকে দেখেছিলাম ঝকঝকে নেতৃত্ব দিতে, দেওয়াল লেখা, স্লোগানে স্লোগানে নায়ক হতে। কিন্তু ওদের অনেকের অদ্ভুত এক হীনমন্যতা ছিল। কেউ একটু ভালো ইংরেজি বলতে পারলেই ওরা সমীহ করতো তাকে। কারণ স্কুলে ইংরেজিটা ঠিক মতো পড়ানো হয়নি। আর ইংরেজি, হিন্দি বলতে পারলে তো কথাই নেই। তাকে স্বপ্ন দেখানো হতো এসএফআই এর সর্বভারতীয় সম্পাদক করার। বিপ্লবী পথে কলোনিয়াল হ্যাংওভারে ক্ষতি নেই বোধহয়।
ডাক্তারবাবু, আপনি তো মেদিনীপুরের। জানেন নিশ্চয়ই ওখানকার উচ্চারণ বা হাওড়ার কিছু মানুষের ইংরেজি উচ্চারণ। আপনি ভদ্রলোক কমিউনিস্ট। মোটা মোটা বই পড়েছেন। Mother Tongue Influence মানে আমরা যাকে জিভ মোটা বলি তা নিশ্চয়ই জানেন। ইংরেজি উচ্চারণ কয় ধরনের হয় তাও। আচ্ছা গণশক্তিতে ভারতের এক ডজন ইংরেজি নিয়ে কোনদিন কিছু ছাপা হয়েছে? ইন্টারেস্টিং কিন্তু। বলতে পারেন। আমি লিখতে ইচ্ছুক। মানে এই ধরুন বাঙালিদের ইংরেজি উচ্চারণ, দক্ষিণ ভারতীয়দের উচ্চারণ, বিহারি বা উত্তর প্রদেশের ইংরেজি উচ্চারণ প্রভৃতি।
বাংলাদেশের অনেক শব্দ অপভ্রংশ হয়ে হয়ে একটা আকার নিয়েছে। এবার যারা সংস্কৃত ও শুদ্ধ বাংলায় তৎসম শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, তারা ওই ‘স’ বা ‘র’ এর সমস্যাতে ভোগে না। কিন্তু যারা ওই অপভ্রংশ হয়ে আসা Phonology র অংশ, তাদের হয় সামবাজারের সসিবাবু বা পবলেম হয়।
এটা খিল্লি করতেই পারে কোন গেরিলা ডিজিটাল যোদ্ধা কিন্তু আপনি নিজে? কাল তবে ওনার বিয়ে, বা হাওয়াই চটি বা রুপ নিয়ে ও করবেন?
আপনি এই পোস্ট দিয়ে যদি ভাবেন সাতমহলা বাড়ির স্যাটা বোসেদের বা রক কনসার্ট এর গেভারাদের আকৃষ্ট করলেন, আদপে আপনাকে ভুল বোঝানো হলো। যে এটা দেখে সহমত পোষণ করবে সে আর যাই হোক আপনার দলটা করবে না।
কিন্তু এটা কালচারে বদলে দিয়ে একটা জিনিস বোধহয় আবার ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছেন আপনি। ওই হামবড়াদের। আপনি অমায়িক মানুষ, লক্ষ্য করে থাকবেন আগে পাড়াতে পাড়াতে কিছু জ্যেঠু বসে থাকতো কাঠের চেয়ার আর লাল চা আলো করে। নিৎসে থেকে নিকারাগুয়া সব বিষয়ে এদের পড়াশোনা ছিল। পাল্টা প্রশ্ন করলে শোধনবাদী ফাদী বলে দিতো আর না করলে “বিপ্লব একডালিয়া ক্রস করেছে, আমাদের তৈরি হতে হবে কমরেড”। সংস্কৃতির ধারকবাহক ছিল এরা মানে ধরুন মাথায় বোমা ড্রপ করলে ও একটা কবিতা বেরোবে না কিন্তু উঠতি কবিকে কয়েকটা Name Drop যথা নেরুদা, আরো অনেকটা নেরুদা, বিদ্রোহী কবি নেরুদা আর তারপর অন্য নাম মনে না পরলে জঁ-পল সাত্রে।
রাশিয়ার সাইজের ইগো সাদা পাঞ্জাবির নিচে পুষে রাখতো এরা। ভেবেছিলাম এরা দুষ্টু লোকের মতো ভ্যানিশ হয়ে গেছে দল থেকে। কিন্তু দলপতির একাউন্ট থেকেই যদি এই মানসিকতা তৈরি হয়, মিনমিন করছে যে Intellectual Arrogant রা তারা তো সাধু সাধু করবে।
![সূর্যকান্ত মিশ্রকে খোলা চিঠি---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 4 58796981 2441211909268667 609817001627484160 n](https://ekhonkhobor.com/wp-content/uploads/2019/04/58796981_2441211909268667_609817001627484160_n.jpg)
তদন্ত হোক এই টুইট নিয়ে। আপনাকে কিছু বলতে হবে না। আমরা জানি আপনি কাদের সাথে থাকেন ৩৬৫ দিন। আপনি জানি ওদের উচ্চারণ, ঘামের গন্ধ, লড়াকু মেজাজ, প্রথম প্রজন্ম পড়াশোনা করে দুলাইন ইংরেজিতে কথা বললে ঝলমলে মুখমণ্ডল।
আমার বিশ্বাস আপনি ও মনে করেন বাঙালিদের জন্য ইংরেজির ভুল উচ্চারণই কোন মুখ্যমন্ত্রীকে সমালোচনা করার মাপকাঠি হতে পারেনা।
ভালো থাকুন ডাক্তারবাবু।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত