[Total_Soft_Poll id=”2″]
গরিব দেশের কোটিপতি সাংসদ! সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! এখনও দেশের বহু মানুষই যেখানে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে, সেখানে কী করে ৪৩০ জন সাংসদ কোটিপতি হয়? ভোটের মুখে এবার উঠছে এ প্রশ্নই। কারণ অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) জানিয়েছে, গত লোকসভা ভোটে জয়ী ৫২১ জন সদস্যের হলফনামা পরীক্ষা করে দেখা গেছে ৮৩ শতাংশ সাংসদই কোটিপতি! কোটিপতি, মানে বড়লোক। তা হতে গেলে অপরাধী হতে হয় কি না, সেই প্রশ্নও কিন্তু উঠতেই পারে। কআরণ ৩৩ শতাংশ সাংসদের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ।
এডিআর সংস্থাটি দেশের নির্বাচন সংস্কার নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে। লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা যে হলফনামা জমা দেন, তা বিচার করেই ওই সংস্থা তাদের রিপোর্ট তৈরি করে। দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ২০১৪ সালের ভোটে যাঁরা জয়ী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৫২১ জনের হলফনামা খুঁটিয়ে দেখে সংস্থাটি এই সিদ্ধান্তে এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী শাসক দল বিজেপিতেই কোটিপতি সদস্যের সংখ্যা সর্বাধিক। ফৌজদারি মামলাও সবচেয়ে বেশি শাসক দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
এডিআর এর হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ৫২১ জনের মধ্যে কোটিপতি সাংসদ ৪৩০ জন। এঁদের মধ্যে বিজেপির সদস্য হলেন ২২৭, কংগ্রেসের ৩৭, তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে দলের ২৯ এবং বাকিরা অন্য দলের কিংবা নির্দল সদস্য। এই সদস্যদের মধ্যে ৩২ জন রয়েছেন যাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকারও বেশি। লোকসভার মোট সদস্য ৫৪৩ জন। এডিআরের হিসেব অনুযায়ী সদস্যদের গড় সম্পত্তি দাঁড়াচ্ছে ১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ওই ৫২১ সদস্যের মধ্যে মাত্র দু’জন রয়েছেন যাঁদের সম্পত্তির মূল্য ৫ লাখেরও কম।
ফৌজদারি মামলা যেসব সাংসদের বিরুদ্ধে রয়েছে তাঁদের সংখ্যা ১০৬। মামলাগুলোও গুরুতর। যেমন খুন বা খুনের চেষ্টা, নারী নির্যাতন, অপহরণ বা সাম্প্রদায়িকতায় উস্কানি দেওয়া ও হিংসা ছড়ানো। ১০ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা চলছে। এঁদের মধ্যে ৪ জন বিজেপির সাংসদ। কংগ্রেস, এনসিপি, আরজেডি বা এলজিপির একজন করে। ১৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে শাসক দল বিজেপির সদস্য ৮ জন। আরও ১৪ জনের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে, যাঁদের ১০ জনই বিজেপির সাংসদ।
রাজনীতিকে অপরাধীমুক্ত করার জন্য কিছু নির্বাচনী সংস্কার হয়েছে। কিন্তু তাতে রাজনীতি অপরাধীমুক্ত হয়নি। বর্তমান আইন অনুযায়ী, কোনও মামলায় কারও দু’বছরের বেশি সাজা হলে তিনি মোট ৮ বছর ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার হারাবেন। যত বছরের সাজা, তার সঙ্গে যোগ হবে আরও ৬ বছর। এই নিয়ম অনুযায়ী পশুখাদ্য মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব ১১ বছর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। উচ্চতর আদালত অপরাধীর দণ্ড কমিয়ে দিলে অথবা বেকসুর খালাস করলে অন্য কথা।
[Total_Soft_Poll id=”3″]
প্রার্থীর হলফনামায় সম্পত্তির পরিমাণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক হলেও সেই সম্পত্তি কীভাবে অর্জিত তা দাখিল করা বাধ্যতামূলক নয়। বহু প্রার্থীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগের সম্পত্তি কয়েকশো গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কী করে এই বৃদ্ধি সম্ভব, সেই ব্যাখ্যা দেওয়াও প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। উল্লেখ্য, এডিআরের করা আরেক সমীক্ষায় উঠে এসেছিল যে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়া ৫১৯ জন বিধায়কের মধ্যে ৪০০ জনই কোটিপতি। এবং সেখানেও একটা বড় অংশ ছিল বিজেপির বিধায়কদের। অর্থাৎ এর থেকেই স্পষ্ট যে, মোদী জমানায় দেশের মানুষের বিকাশ না হলেও, ‘আচ্ছে দিন’ এসেছে বিজেপির বিধায়ক-সাংসদদের।