এবার আর বিরোধীদের সভায় বা আইপিএল ম্যাচের গ্যালারিতে নয়। খোদ ‘চৌকিদার’-এর সভাতেই তাঁকে চোর বলে দেগে দিলেন আগত এক শ্রোতা। গতকাল, শুক্রবার যোগীর রাজ্যে তিন-তিনটি সভা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তারই একটিতে, ‘আমরা সব চৌকিদার…’ এ পর্যন্ত বলে মোদী যেই না একটু থামলেন, পিছন থেকে বছর বিশেকের এক যুবক বলে উঠলেন, ‘চোর হ্যায়’! তবে এ কথা বলার পরে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর মাথার পিছনে চটাস করে এক চাটি পড়ে। চাপড়টা দেন পাশের জন, যাঁর মাথায় ‘বিজেপি’ লেখা টুপি। জামার উপরে অনলাইনে অর্ডার করা ‘নমো এগেন’ জ্যাকেট। তাঁর রাগে কটমট করা চোখের দিকে তাকিয়েই কাঁচুমাচু মুখে থাপ্পড় খাওয়া যুবকটি বলেন, ‘টিভিতেই তো শুনেছি। মারছেন কেন?’ বলেই এক ছুট্টে ভিড়ে মিশে যান তিনি।
মোদীর সভায় মঞ্চের সামনের দিকে ভিড়টার বরাবরের একটিই কাজ: ‘মোদী-মোদী-মোদী’। বাসে-ট্রেনে-ট্রাক্টরে আনা ভিড়। তাঁদের অনেকের গলায় ঝোলানো ‘ভিআইপি’ পাস। গতকালও তাঁর অন্যথা হয়নি। শুক্রবারও পিছন দিকেই জায়গা হয়েছিল আমজনতার। দূর থেকে ‘ছোট্ট’ মোদীকে দেখার একটাই উপায়। পেল্লাই এক-একটি এলইডি স্ক্রিন। জনতার ওটাই ভরসা। অবশেষে মোদী মঞ্চে এসে বললেন, ‘বিজেপির হয়ে ক্ষমা চাইছি। প্যান্ডেল ছোট হয়ে গিয়েছে। ভিতরের থেকে বাইরে দ্বিগুণ লোক। এই প্রবল রোদেও। শপথ নিচ্ছি, আপনাদের এই কষ্ট সুদ সমেত উন্নয়ন করে ফেরত দেব।’
উল্লেখ্য, ৫ বছর আগেও ঠিক এমন কথাই লোকসভার প্রচারে বলতেন মোদী। এমন ভাবেই দীর্ঘ ৫ বছরে প্রতিশ্রুতির পাহাড় গড়েছেন তিনি। ঘড়ি ধরে ঠিক পনেরো মিনিট। যে সময়টায় মোদী ব্যস্ত ছিলেন পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গি নিকেশের বাহবা কুড়োতে। আর কংগ্রেসের ইস্তাহারকে ‘ডকোসলা পত্র (ধোঁকা পত্র)’ বলে জঙ্গীদের প্রতি নরম মনোভাব দেখানোর অভিযোগ তুলে। ‘টুকড়ে-টুকড়ে গ্যাং’-এর প্রতি কংগ্রেসের প্রেমের কথা বলে। তাঁর আসার আগে বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানও ছিলেন অন্য নেতাদের প্রচারের হাতিয়ার। ব্যস! ওইটুকু শুনেই পিছনের ভিড় পাতলা হতে শুরু করে বাড়িমুখো। মোদীর টেলিপ্রম্পটারের পর্দায় তখনও আসল রাজনৈতিক আক্রমণের চিত্রনাট্যের অনেকটাই ভেসে ওঠা বাকি।
দিন দুয়েক আগেই সহারনপুরের দায়িত্বে থাকা আরএসএসের এক সক্রিয় সদস্য বলেছিলেন, ‘উত্তরপ্রদেশে তিরিশটির মতো আসন খোয়ানোর প্রবল আশঙ্কা। বিশেষ করে বুয়া-বাবুয়ার জোটের পর। জাতির সমীকরণ একমাত্র হিন্দুত্ব আর দেশভক্তির তাসেই মিটতে পারে।’ সেইমতোই মোদী তুললেন দাঙ্গার কথা, কৈরানায় হিন্দু পলায়নের কথা। আম্বেদকরকে অবহেলার কথা। আর নিশানা করলেন ‘বহেনজি’-কেও। গুঁজলেন সেই আখচাষিদের বকেয়ার প্রসঙ্গও, যোগীর আমলে এখন যাঁরা ‘গরুরও চৌকিদার’! আর সব শেষে যেতে যেতে মোদী ভরসা দিলেন, বকেয়া যাতে না হয়, তার পাকা ব্যবস্থা হচ্ছে। আপাতত ভোটের আগে সকলকে শপথ নিতে হবে চৌকিদার হওয়ার। মানে আবারও সেই জুমলা, আবারও সেই গিমিক!
তবে মোদী যাই বলুন না কেন, তাঁর সভাতেই এবার যেভাবে চৌকিদারকে চোর বলে বসলেন সভায় উপস্থিত শ্রোতা, তা থেকে এটাই স্পষ্ট যে চৌকিদারের ভাষণবাজির থেকেও আমজনতার কানে এখন বেশি করে বাজছে বিরোধীদের স্লোগানই।