লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে বাকি আর মাত্র ৫ দিন। আগামী সপ্তাহের ১১ তারিখ প্রথম দফার ভোট। আর ঠিক তার আগেই নির্বাচন কমিশনের এক নির্দেশে বড়সড় রদবদল হল কলকাতা-সহ রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনে। শুক্রবার রাতে দিল্লী থেকে নির্দেশ আসা মাত্রই সরিয়ে দেওয়া হল কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এবং বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংকে। অনুজ শর্মার জায়গায় কলকাতা পুলিশের নতুন কমিশনার হচ্ছেন রাজেশ কুমার। তিনি আগে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এডিজি পদে ছিলেন। আর বিধাননগরের কমিশনার হয়েছে রাজ্য পুলিশের এডিজি (অপারেশন্স) নটরাজন রমেশ বাবুকে।
শুধু তাই নয়। কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারদের পাশাপাশি ভোটের আগে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বীরভূম ও ডায়মন্ড হারবারের দুই পুলিশ সুপার এসপি শ্যাম সিং এবং এস সেলভি মুরুগানকেও। ডায়মন্ড হারবারে মুরুগানের জায়গায় এলেন কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের ডিসি শ্রীহরি পান্ডে। বীরভূমের নতুন পুলিস সুপার হলেন বিধাননগরের ডিসি (এয়ারপোর্ট ডিভিশন) আভারু রবীন্দ্রনাথ। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই বদলের কোনও কারণই জানানো হয়নি রাজ্যকে। তবে কমিশন সূত্রের খবর, ওই চার জনের বিরুদ্ধেই নাকি বিজেপি-সহ বিরোধী পক্ষ অভিযোগ করেছিল! আর সেসবের সত্যতা যাচাই না করেই বিরোধীদের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে সরানো হল চার পুলিশ কর্তাকে। কমিশন এ-ও বলেছে যে, অবিলম্বে তাদের নির্দেশিকা কার্যকর করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে কমিশনে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সরকারি বাসভবনে নজিরবিহীন ভাবে সিবিআই অফিসারেরা হানা দিলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ধর্না-মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে উপস্থিত ছিলেন কিছু শীর্ষ পুলিশকর্তা। সেই পুলিশকর্তাদের মধ্যে ছিলেন অনুজ এবং জ্ঞানবন্ত। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই কারণেই এবার বিজেপির তরফ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে ভুয়ো অভিযোগ এনে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে পাকাপাকি ভাবে সরানোর বন্দোবস্ত করা হল। অপসারিত চার জন আইপিএস অফিসারকে কোন পদে পাঠানো হবে, তা-ও বলেনি কমিশন। তাদের স্পষ্ট নির্দেশ, যা-ই হোক না কেন, ওই চার জন যেন ভোটের কোনও কাজে না থাকেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬-য় রাজ্যে বিধানসভা ভোট শুরু হওয়ার পরে (কলকাতায় ভোটের আগে) ঠিক একই রকম ভাবে তখনকার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিয়েছিল কমিশন। সেই সময়ও কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনও কারণই দর্শায়নি। তবে শাসক দলের প্রথম সারির এক নেতা বলেছেন, ‘নির্বাচনের সময় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় কমিশনই। তবে বিরোধীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সব কিছু পরিচালিত হলে মুশকিল!’