প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই গেরুয়া শিবিরে শুরু হয়ে গিয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল। দীর্ঘ টালবাহানার পর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতেই সেই কোন্দল এখন তুঙ্গে। কোচবিহার, দুই মালদা, জলপাইগুড়ি, মথুরাপুর, হুগলী, সব জায়গায় একই চিত্র। রায়গঞ্জের কর্মীদের ক্ষেত্রেও দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল। তার ওপর নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পরে হাজির হওয়ায় এবার দলীয় কর্মী-সমর্থকরা কান ধরিয়ে ক্ষমা চাওয়ালেন রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীকে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হেমতাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের ঠাকুরবাড়ি এলাকায়।
ওদিন ওই এলাকায় বিজেপির একটি নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করে দলীয় কর্মিসভায় যোগ দেওয়ার কর্মসূচি ছিল দেবশ্রীর। বিকেল ৫টা নাগাদ তাঁর উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ, তিনি সেখানে পৌঁছন রাত ৮টা নাগাদ। এর আগে তিনি বিজেপির হেমতাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের সংযোজক শিবানী মজুমদার ও তাঁর স্বামী বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সহ সভাপতি গোপাল মজুমদারের সঙ্গে দেখা করতে তাঁদের বাড়িতে যান। তাঁদের বাড়ি হেমতাবাদ সদর এলাকায়। সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন জেলা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী শিবানী ও তৎকালীন হেমতাবাদ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি গোপাল অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন।
দেবশ্রী রাত ৮টা নাগাদ দলের অস্থায়ী নির্বাচন কার্যালয় ও দলীয় কর্মিসভায় যোগ দিতে ঠাকুরবাড়ি এলাকায় পৌঁছতেই বিজেপির কয়েকশো কর্মী ও সমর্থক তাঁকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কেন দেবশ্রী দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানকারী ওই দুই নেতা-নেত্রীকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের বাড়িতে গেলেন, সেই প্রশ্নও তোলেন বিজেপির কর্মী ও সমর্থকেরা। জেলা নেতারা বহু চেষ্টা করেও বিক্ষোভ সামাল দিতে ব্যর্থ হন। শেষমেশ দেবশ্রী বিক্ষোভকারীদের সামনে হাত জোড় করে ও দুই কান ধরে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভকারী বিজেপি কর্মীদের দাবি, ঠাকুরবাড়ি এলাকায় ওই দিনের কর্মসূচিতে হেমতাবাদ বিধানসভার বিন্দোল, ভাটোল, রামপুর, শীতগ্রাম ও হেমতাবাদ পঞ্চায়েত থেকে দলের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক যোগ দিয়েছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে তাঁরা ভুটভুটি, ভ্যান রিকশা, সাইকেল ও মোটরবাইকে চেপে হাজির হন। এক সমর্থক জানান, ‘দূরদূরান্ত থেকে আসা দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের তিনি তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। সেই সময় তিনি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানকারী ওই দুই নেতা ও নেত্রীর বাড়িতে যান।’
অন্যদিকে, ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে দেবশ্রীর সাফাই, ‘সমর্থকরা আমাকে আরও বেশি সময় ধরে চাইছেন। তাই কর্মসূচিতে আমার পৌঁছতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। বিজেপির সমর্থনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। তাই আমাকে ঘিরে বিক্ষোভ দলের পক্ষে অত্যন্ত শুভ।’ তবে দেবশ্রী মুখে যাই বলুন না কেন, তিনি ভাল মতোই টের পাচ্ছেন যে দলের কর্মী-সমর্থকরা তার ওপর অসন্তুষ্ট। অন্যান্য কেন্দ্রের মতো তাঁর ক্ষেত্রেও প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবি উঠতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।