গোষ্ঠীকোন্দলের কারণে দিন কয়েক আগেই দল ছেড়েছেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি সুবল ভৌমিক। ভোটের একদম দোরগোড়ায় এসে আবারও ত্রিপুরায় বেকায়দায় পড়ল বিজেপি। জানা গেছে, লোকসভা নির্বাচনের আসন নিয়ে উভয় শিবিরের দড়ি টানাটানির জেরে তিক্ততা চরমে উঠেছে বিজেপি ও আইপিএফটির। যার ফলে বছর ঘুরতেই ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন বিজেপি-আইপিএফটি জোটের মধ্যে ফাটল ক্রমশই আরও চওড়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে শুক্রবার রাজ্যের দুটি’র মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা কেন্দ্রে উভয় দলের প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
প্রসঙ্গত, বিজেপির হয়ে এই কেন্দ্রে লড়ছেন দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত প্রতিমা ভৌমিক। অন্যদিকে, সংরক্ষিত না হলেও ৩০ শতাংশের বেশি উপজাতি এবং সংখ্যালঘু ভোটের ভরসায় এই কেন্দ্রে আইপিএফটি’র হয়ে দাঁড়াচ্ছেন শুক্লচরণ নোয়াটিয়া। তবে এখানেই থেমে থাকছে না জোটের কোঁদল। অপর আসন তথা ত্রিপুরা পূর্ব কেন্দ্রেও উভয় দলই প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
অন্তত ৪০ শতাংশ উপজাতি ভোট সর্বস্ব এই কেন্দ্রের আইপিএফটি সুপ্রিমো তথা রাজ্যের জোট সরকারের অন্যতম মন্ত্রী স্বয়ং এনসি দেববর্মা আগামী ২৫ তারিখ মনোনয়ন জমা দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। বিজেপি প্রার্থী করছে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং দলের উপজাতি মুখ রেবতী ত্রিপুরাকে। শেষমেশ রফা না হলে সিপিএম ও কংগ্রেসকে নিয়ে এবার ত্রিপুরায় সেই অর্থে চতুর্মুখী লড়াই হতে চলেছে। যদিও মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন না গেলে সিপিএম বা কংগ্রেস এনিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে পৃথক তুইপ্র্যাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে সরব থাকা আইপিএফটিকে কাছে টেনে জোট করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। ২৫ বছর টানা ক্ষমতায় থাকা বাম সরকারকে হঠাতে তখন তুইপ্র্যাল্যান্ড নিয়ে কেন্দ্রের তরফে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু এক বছরে সেই দাবি মেটানোর ধারেকাছে যায়নি দিল্লীর সরকার। পাশাপাশি গ্রাম স্তরে বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান পদ নিয়েও বিজেপি তাদের বিশেষ পাত্তা না দেওয়ায় সব মিলিয়ে আইপিএফটির ক্ষোভ চরমে উঠেছে। বিশেষ করে দলের নিচুতলায় এই ক্ষোভ চরমে উঠেছে। যার ফলে, দলের দুই মন্ত্রী তথা সভাপতি এনসি দেববর্মা ও সাধারণ সম্পাদক মেবার জামাতিয়া’র উপর চাপও তৈরি হয়েছে প্রত্যাশিতভাবে।
জানা গেছে, সংসদে গিয়ে রাজ্যের উপজাতিদের দাবিদাওয়া নিয়ে সরব হওয়ার জন্য অন্তত পূর্ব ত্রিপুরা কেন্দ্রটি যাতে তারা পায় সেজন্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে কাছে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই দরবার শুরু করেন দলের দেববর্মা-মেবাররা। দলের অন্দরের ধূমায়িত ক্ষোভ এই কৌশলে সামাল দেওয়ার প্ল্যান করেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের সেই হিসেব মেলেনি দুটি আসনেই লড়াই করার ব্যাপারে বিজেপি অনড় মনোভাব নেওয়ায়। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেও পূর্ব আসনের দাবি পূরণে ব্যর্থ হন দেববর্মারা।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি আইপিএফটি নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই জানিয়ে দেন, জোট সরকারের শরিক হলেও তারা লোকসভা ভোটে দুটি আসনেই লড়বে। বিজেপি যদি তাদের অনড় মনোভাব ত্যাগ না করে তাহলে এই ভোটে তাদের ফল ভুগতে হবে। এমনকী, দুই কেন্দ্রের জন্য প্রার্থীর নামও তারা ঘোষণা করে রাখে। তারা ভেবেছিল, তাদের এই হুমকি’র ফলে হয়তো বিজেপি শেষমেশ পূর্ব কেন্দ্রটি তাদের জন্য ছেড়ে দেবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দোলের দিন রাতে দিল্লী থেকে দুই কেন্দ্রের জন্যই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রতিমা ও রেবতীর নাম ঘোষণা করে দেয়।
অন্যদিকে, বিজেপির এই অনমনীয় মনোভাব দেখে ওই রাতেই শুক্লচরণকে পশ্চিম কেন্দ্রে মনোনয়ন জমা করানোর সিদ্ধান্ত নেয় আইপিএফটি নেতৃত্ব। সংঘাতের এই আবহ সম্পর্কে মেবার এদিন বলেন, পারস্পরিক বোঝাপড়ার রাস্তায় বিজেপি হাঁটতে চায়নি বলেই এই মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে। আমাদের সোজা কথা—একটা নাও, একটা দাও। দুটোই খাব—ওদের এই আগ্রাসী মনোভাবে রাজ্যের উপজাতিরা বেজায় ক্ষুব্ধ। লোকসভা ভোটেই সেটা ওরা টের পাবে।