প্রতিদিনের ঘাত-প্রতিঘাতের রক্তাক্ত কাশ্মীরের মন ভালো নেই। ভারত-পাক অশান্তির জেরে সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন পর্যটকরা। ডাল লেকে খালি শিকারা অবসর যাপন করলেও মাথায় হাত পড়েছে কাশ্মীরের ব্যবসায়ী, শিকারা চালক-সহ অধিকাংশের। ডাল লেকের বিভিন্ন অংশে শিকারা নিয়ে ঘুরে ঘুরে সব্জি বিক্রি করা আশিক আহমেদ বলেন, ‘অন্যান্য বছর এই সময়ে আমার দিনপিছু আয় ছিল প্রায় ২ হাজার টাকা। কিন্তু এখন আমি কোনওমতে ৩০০ টাকা আয় করে দিন কাটাচ্ছি। এই অবস্থায় নতুন কোনও কাজের সন্ধান করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’
পর্যটন ব্যবসা থেকে অন্য পেশায় পা বাড়ানোর কথা ভাবছেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা অনেক ব্যবসায়ী। এই রক্তক্ষয়ী ববাদের শেষ কোথায় সে কথা কেউ জানে না। অনেকেই সব্জি-ফলমূল বিক্রি করে দিন গুজরান করার চেষ্টা করছেন। বিক্রেতা আর ক্রেতার সম্পর্ক তো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। কেনার মানুষ নেই। তাই ফল বা সব্জি বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসলেও বিক্রিবাটা হচ্ছে নামেমাত্র। পুলওয়ামা এবং পরবর্তী ঘটনা কাশ্মীরের পর্যটনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। জঙ্গী হানার জন্য পর্যটকদের সংখ্যা কমতে শুরু করে, যার প্রভাব পড়ে পর্যটন ব্যবসাতেও। কাশ্মীরের মোট জিডিপির প্রায় আট শতাংশ আসে এই পর্যটন ব্যবসা থেকেই। ব্যবসা মার খাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাশ্মীরের অর্থনীতিও।
শুধুমাত্র পর্যটন ব্যবসা নয়, হিংসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাশ্মীরের অন্যান্য ব্যবসাও। কাশ্মীরজুড়ে ৪জির বদলে ২জি মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হয়। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসাও। স্থানীয় এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী মুজিব আহমেদ বলেন, ‘বার বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে আমাদের সংস্থাগুলির উপর। এখানে অধিকাংশ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ হয়। কিন্তু হিংসার কোনও ঘটনা ঘটলেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়”। ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্যুরিয়র সংস্থাগুলির ব্যবসাও। কাশ্মীরের অল ক্যুরিয়র অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কোয়ারি জহর বলেন, ‘গত সপ্তাহে কর্তৃপক্ষের তরফে সাময়িকভাবে বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে সমস্ত ই-কমার্স সংস্থাগুলি তাদের পরিষেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে”।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামা জেলায় জঙ্গীহানার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। পুলওয়ামাকাণ্ডের পর যুদ্ধের আশঙ্কায় পর্যটন সংস্থাগুলি এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ বুকিং বাতিল করেছে বলে খবর। কাশ্মীরের ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশফাক আহমেদ দুগ জানিয়েছেন, “সাম্প্রতিক হিংসার জেরে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের অধিকাংশ বুকিং বাতিল হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, গুজরাতের পাশাপাশি মালয়েশিয়া ও ব্যাঙ্ককের প্রচুর পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন। জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলিতে যেভাবে কাশ্মীর নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা হয়েছে, তার ফলে কয়েকমাস ধরে আমরা কাশ্মীরের পর্যটন নিয়ে যে প্রচার চালিয়েছিলাম, তাও কার্যত বিফলে গিয়েছে”।