পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার পর ক্ষোভের আগুন জ্বলছে গোটা দেশ। এই মুহূর্তে রাজধানীর রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে আলোচনা। টিভির পর্দা থেকে শুরু করে সংবাদ পত্রের পাতা, সবখানেই তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বললেন, ‘কখনও কখনও অ্যান্টি-ন্যাশনাল হওয়াই ঠিক। রাষ্ট্রই আমাদের একমাত্র পরিচিয় নয়। আমাদের নানা রকম পরিচিতি থাকে। জীবনযাত্রার জন্য সেগুলো ভীষণ ভাবে জরুরি।’
বাইরে জাতীয়তাবাদের আবেগ চুঁইয়ে পড়ছে। কিন্তু লোদী এস্টেটে অঁলিয়স ফ্রঁসেজের প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়েছে ভিড়। অর্ধেন্দু সেনের মতো প্রাক্তন আমলাও দেওয়ালে হেলান দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। সিঁড়িতেই হাঁটু গেড়ে বসে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রেক্ষাগৃহের বাইরেও প্রোজেক্টর লাগিয়ে অনুষ্ঠান শোনার ব্যবস্থা। সেখানেও বসার আসন নেই। এরইমধ্যে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলে চলেছেন, জাতীয়তাবাদে বৃহত্তর কোনও মানবিক প্রচেষ্টায় যদি লাভ হয়, তা হলে সমস্যা নেই। কিন্তু যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন তার প্রেক্ষিত ভিন্ন। জাতীয়তাবাদ বিভাজন তৈরি করলে সেটা খারাপ।
তবে শুধু ভরদুপুরের অঁলিয়াস ফ্রঁসেজ নয়, বিকেলে জওহর ভবনেও ৮৫ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদের আলাপচারিতা শুনতে একই ভাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ভিড় উঠে এল। অমর্ত্য ঢোকার আগেই প্রেক্ষাগৃহ ভরে যাওয়ায়, ভবনের চত্বরেই তিনটি জায়গায় প্রোজেক্টর চালিয়ে শ্রোতাদের বসার ব্যবস্থা করতে হয়। প্রসঙ্গত, অঁলিয়স ফ্রঁসেজের অনুষ্ঠানটি ছিল, মোদী জমানায় ‘অর্থনীতির পিছনের দিকে হাঁটা’ নিয়ে বই প্রকাশের অনুষ্ঠান। সেখানে হাজির ছিলেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, অধ্যাপিকা জোয়া হাসান। আর জওহর ভবনে ছিল নাগরিকত্ব, নব্য-জাতীয়তাবাদের জমানায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে আলোচনা।
দিল্লীতে সাধারণত এই ধরনের অনুষ্ঠানে সব সময়ই কিছু পরিচিত মুখ দেখা যায়। কিন্তু মঙ্গলবার এই যুদ্ধং দেহি আবহের মধ্যেও যেভাবে তরুণ-তরুণীরা ভিড় জমালেন, তা দেখে চমৎকৃত জেএনইউ-এর অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ। তাঁকে সামনে পেয়ে অমর্ত্যর সরস মন্তব্য, ‘জেএনইউ থেকে অনেককেই পুলিশ তুলে নিয়ে যায়! মনে হয়, রাষ্ট্রদ্রোহীতা খুব সাধারণ বিষয়!’ আয়ুষ্মান ভারত থেকে শুরু করে মোদী সরকারের নানা প্রকল্প এবং বিশেষ করে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনাও করেছেন তিনি। এমনকি নোটবন্দীকে ‘পি সি সরকারের ম্যাজিক’ বলেও কটাক্ষ করেন এই অর্থনীতিবিদ।