কেন্দ্রের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে অহেতুক তোড়জোড়ের ফলে আসামবাসীর রাতের ঘুম উড়ে গেছে। ইতিমধ্যেই বেশ অনেকজন বাঙালির মৃত্যুও হয়েছে এই কারণে। এই এনআরসির কালো মেঘ এবার থাবা বসাচ্ছে শিলং-এর বাসিন্দাদের ওপরে। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির ওপর ক্ষুব্ধ শিলঙের বাঙালিরা।
সেটা প্রায় চার দশক আগের কথা। গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মেঘের শহর। আর সেই হিংসার অভিমুখ ছিল স্থানীয় বাঙালিদের দিকে। সেই অশান্তির আবহে প্রাণ গিয়েছিল অনেকের। আর আতঙ্কের মেঘ ছেয়েছিল গোটা মেঘালয়ে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তোড়জোড় করায় সেই কালো দিনগুলিই আবার ফিরবে না তো, নতুন করে এমন আশঙ্কা দানা বেঁধেছে এখানকার বাঙালিদের মধ্যে। রাজ্যসভার সর্বশেষ অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাশ করাতে পারেনি কেন্দ্র। তবে তাতেও এখানকার ওকল্যান্ড, জেলরোড, পুলিশ বাজার, রিনঝা, লাবান, আরআর কলোনির মতো এলাকার দু’লক্ষের বেশি বাঙালি বাসিন্দার মনে আশঙ্কার মেঘ কাটছে না।
তাঁদের আশঙ্কাটা যে অমূলক নয়, তা তাঁরা টের পেয়েছেন ক’দিন আগেই। রাজ্যসভায় গত ১৩ এপ্রিল এই সংশোধনী বিলটি পেশ করার কথা ছিল। শেষমেশ বিলটি পেশ না হওয়ায় শিলংয়ের খাসি ছাত্র সংগঠনের তরফ থেকে বিজয় মিছিল বের হয়। রিনঝায় তেমনই একটি বিজয় মিছিল থেকে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর হয়েছে। ফলে এখানকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা আরও বাড়ছে। কেন্দ্র বিল পেশে ব্যর্থ হওয়ার পরেই খাসি ছাত্র পরিষদসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সংযুক্ত ফোরামের (নেসো) তরফে সিনম প্রকাশ ও স্যামুয়েল জাইরয়া জানিয়ে দেন, এটা তাঁদের আন্দোলনের নৈতিক জয়।
তবে উত্তর-পূর্বের আদি বাসিন্দাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তাঁদের লড়াই চলবে। সেই লড়াইয়ের আঁচ তাদের উপরও যে আসবে না, এমনটা মনে করছেন না পাহাড়ি শহরের বাঙালিরাও। বর্তমানে মেঘালয়ের জনসংখ্যা ২৭ লক্ষের কাছাকাছি। তারমধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি খাসি, গারো বা জয়ন্তিয়ার মতো জনজাতিভুক্ত। ৮ শতাংশের মতো বাঙালি রয়েছেন এ রাজ্যে। যাদের সিংহভাগই হিন্দু। এদের মধ্য যারা খাতায় কলমে অনুপ্রবেশকারী, নাগরিকত্ব বিল পাশ হলে তারও হিন্দু হওয়ার সুবাদে নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। এখানকার মূল বাসিন্দাদের আশঙ্কা, নাগরিকত্ব বিল সংশোধন হলে তখন নিজ ভূমে তাঁরাই পরবাসী হয়ে যাবেন। তাঁরা যে সব সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন, বিল পাশ হলে বঞ্চিত হবেন তা থেকেও। জয়ন্তলালরা বলেন, ‘দীর্ঘদিনের অশান্তির পর্ব শেষে একটা সহাবস্থানের পরিবেশ রয়েছে এখানে। সেটা যেন ভেঙেচুরে না-যায়।’