তাঁর গোল করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও অবকাশ নেই। কিন্তু বর্তমানে একদমই ফর্মে নেই বার্সেলোনার উরুগুয়ের স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। এবং তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচগুলোতে। ইউরোপের ম্যাচগুলোতে বার্সেলোনা তাদের মূল স্ট্রাইকারের কাছ থেকে একটিও গোল পাচ্ছে না।
তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। ফর্মে থাকলে তিনি প্রতিপক্ষের জন্য কতটা ভয়ংকর সেটি নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু ফর্মে না থাকলে তিনি রীতিমতো যাচ্ছেতাই। তাঁর যাচ্ছেতাই ফর্মের আঁচ এখন টের পাচ্ছে খোদ বার্সেলোনা, বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগে। ইউরোপ-সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতায় সর্বশেষ ১৭টি ম্যাচ খেলে মাত্র একটা গোল করতে পেরেছেন সুয়ারেজ। এমনকি অলিম্পিকে লিওঁর বিপক্ষেও তিনি নিষ্প্রভ ছিলেন। যার খেসারত দিয়েছে বার্সেলোনা। গোলশূন্য ড্র করেছে তারা।
এই মরশুমে স্প্যানিশ লিগে এর মধ্যেই অবশ্য ১৫ গোল করে ফেলেছেন তিনি, তাই সুয়ারেজ যে একেবারে গোল করতে ভুলে গেছেন তা কিন্তু নয়। কিন্তু স্পেনের বাইরে গেলেই নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে সর্বশেষ গোল করেছিলেন সেই ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। হিসাব করলে ইউরোপে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা (১৪৪০ মিনিট) ধরে গোল করতে পারছেন না সুয়ারেজ!
এরপর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ তিন-তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছে, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো আরও দুইবার বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব পাওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের প্রথম বড় শিরোপা জিতেছেন, হোসে মরিনহো দুটি ক্লাব থেকে ছাঁটাই হয়েছেন তাও সুয়ারেজ প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে গোল করতে পারেননি!
শুধু যে গোল করতে পারছেন না তা নয়, সুয়ারেজের খেলছেনও বাজে। অনেক সময় দেখা যায়, খেলোয়াড়েরা গোল না করতে পারলেও গোল সহায়তা করে বা ভালো খেলে সেটা পুষিয়ে দেন। সুয়ারেজ সেটিও করতে পারছেন না। লিগের সর্বশেষ ম্যাচটার কথাই চিন্তা করুন। শুধু শেষ কয়েক মিনিটেই সুয়ারেজকে চার-চারটা গোল করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। প্রত্যেকটা সুযোগ ‘সফলতা’র সঙ্গে নষ্ট করেছেন তিনি।
সুয়ারেজের এই ফর্মের কারণেই গত রাতে লিওঁর বিপক্ষে প্রথমার্ধে দেখা গেছে সতীর্থ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার পরেও মেসি তাকে পাস না দিয়ে নিজেই গোল করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ার্ধেও গোল করার দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন সুয়ারেজ। বলতে গেলে বার্সেলোনায় এখন সুয়ারেজ ছাড়া কোনো স্ট্রাইকার নেই। পাকো আলকাসের বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে যোগ দিয়েছেন, মুনির এল হাদ্দাদিকেও পাঠানো হয়েছে সেভিয়ায়। এই অবস্থায় সুয়ারেজই বার্সেলোনার একমাত্র স্ট্রাইকার।
আবার এই জানুয়ারিতে অভিজ্ঞ কেভিন-প্রিন্স বোয়েটেং কে আনা হলেও তিনি ঠিক প্রথাগত স্ট্রাইকার নন, রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে সর্বশেষ লিগ ম্যাচে ভালো খেলেননি তিনিও। তিন বছর ধরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা নিয়ে উল্লাস করতে দেখে দেখে বিরক্ত বার্সেলোনা এবার নিজেরা শিরোপাটা জিততে চায়। আর সে শিরোপা জেতার জন্য সুয়ারেজের ফর্মে ফেরাটা অনেক জরুরি।