বিগত কয়েক দিন ধরেই গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ একটা অংশ নানা ভুয়ো খবরে ছেয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, রাজ্যের একটা অংশে নাকি দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়েছে! তারা নাকি ভয়ানক সব কাজকর্মও করছে। যদিও সবটাই গুজব কিন্তু সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন, তাঁদের সচেতন করতে এগিয়ে এলেন সুভাষগ্রামের কোদালিয়ার বাসিন্দা বাবলু চক্রবর্তী। যিনি নিজে দৃষ্টিহীন হয়েও বাকিদের বলছেন, গুজব রুখতে চোখ খোলা রাখুন।
বাবলু চোখে দেখেন না৷ হাঁটাচলার সম্বল বলতে হাতের লাঠি। সেই লাঠি হাতেই এলাকায় ঘুরছেন বছর ষাটের বৃদ্ধ। কাঁধে ঝোলানো মাইক নিয়ে হেঁকে বলছেন, ‘গুজবে কান দেবেন না’। মঙ্গলবার চম্পাহাটি বাজারে এ ভাবেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করছিলেন বাবলু চক্রবর্তী। এই বাজারেই লটারির টিকিট বিক্রি করে সংসার চলে তাঁর। তবে গুজব কাণ্ডের জেরে সে কাজ শিকেয় তুলে মানুষটা রাস্তায় নেমেছেন মানুষকে সচেতন করতে।
চায়ের দোকানগুলির সামনে লোকজনের জটলা বুঝতে পারলেই তাঁদের কাছে গিয়ে বাবলু অনুরোধ করছেন, অযথা ভুল খবর না রটাতে। কোথাও কোথাও টিটকিরিও শুনতে হচ্ছে। ভারী গলায় ধমক জুটছে। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের সাধ্য মতো বিবেক-বুদ্ধির কথা বলছেন বাবলু।
বাবলুর কথায়, ‘‘সকলেই এই নিয়ে কথা বলছে। এলাকায় নাকি দুষ্কৃতী ঢুকে পড়েছে। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। কিন্তু আমার বুদ্ধিতে মনে হচ্ছে, এ সবই গুজব। পুলিশ-প্রশাসন থেকেও শুনলাম তাই বলেছে। তাই টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখে এলাকায় ঘুরে সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করছি”। তিনি আরও বলেন “অনেকেই প্রচারে বাধা দিচ্ছে। বলছে, সত্যিই নাকি এ সব ঘটছে। একজন একটা জায়গার কথা বলে বললেন ওখানে এ রকম ঘটেছে। আমি পাল্টা বললাম, আমায় নিয়ে চলো। দেখব কী হয়েছে। তাতে উনি চুপ করে গেলেন।’’
রবিবার মগরাহাট এলাকায় সন্দেহের বশে দু’জনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। চোর বা কিডনি পাচারকারী সন্দেহে একের পর এক গণপিটুনি চলছে। জয়নগরের বহড়ু স্টেশন চত্বরে দু’জন অজ্ঞাতপরিচয়কে বেধড়ক মারধর করা হয়। একই ঘটনা ঘটে বেলিয়াচণ্ডী, মোমরেজগড়ে। শুধু গুজব ছড়িয়ে নিরাপরাধ লোকদের মারধরই নয়, হামলা-লুটপাটও হচ্ছে দোকানপাটে।
অপপ্রচারে প্রভাবিত ও আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য প্রশাসন থেকে প্রচার শুরু হয়েছে সর্বস্তরে। পঞ্চায়েত, পুলিশের তরফে এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচার চলছে। তবে তার মধ্যেও নিজের মতো করে মানুষকে সচেতন করার কাজ করে চলেছেন বাবলু।