গতকাল কলকাতা পুলিশ বনাম সিবিআইয়ের দ্বৈরথের রেশ আছড়ে পড়ল দিল্লী-সহ গোটা দেশেই। সিবিআই ইস্যুতে উত্তাল হল সংসদ। আর সংসদের ভেতরে-বাইরে তৃণমূলের পাশে দাঁড়াল সবকটি বিজেপি বিরোধী দল। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি সরকারকে একহাত নিল মোদীর ‘বন্ধু’ বলে পরিচিত নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল(বিজেডি)। শুধু তাই নয়, মমতাকে সমর্থন করে মোদী সরকারের সমালোচনায় মুখর হল এনডিএ শরিক শিবসেনাও।
‘স্বৈরাচারী’ বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মমতার সত্যাগ্রহ আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে জাতীয় স্তরে সরব দেশের তাবড় তাবড় বিরোধী নেতারা। রবিবার রাতেই মমতার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, বসপা নেত্রী মায়াবতী, সপা প্রধান অখিলেশ যাদব, জেডি(এস) প্রধান তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া, টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নায়ডু, ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন, লোকতান্ত্রিক জনতা দলের নেতা শরদ যাদব-সহ আরও অনেকের।
গতকাল এক প্রশ্নের উত্তরে বিজেপির জোটসঙ্গী শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত সরাসরি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলার মতো বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি ধর্নায় বসতে বাধ্য হন, তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সিবিআইকে অপব্যবহার করা হলে সেটা দেশ ও সিবিআইয়ের ভাবমূর্তির প্রশ্ন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিবিআইয়ের কাঁধে বন্দুক রেখে রাজনৈতিক লড়াইয়ে জয় সম্ভব নয়।’
সোমবার সকাল থেকে লোকসভা ও রাজ্যসভা সিবিআই ইস্যুতে জোটবদ্ধ ছিল বিরোধীরা। তৃণমূল সাংসদরা লোকসভার ওয়েলে নেমে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্লোগান দেন, ‘সিবিআই তোতা হ্যায়’, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’। গলা মেলান কংগ্রেস, সপা, বসপা, এনসিপি, আরজেডি, টিডিপির সাংসদরাও।
অন্যদিকে নবীন পট্টনায়কের বিজেডিও গতকাল মোদী সরকারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন। দলের লোকসভার দলনেতা ভর্তৃহরি মেহতাব বলেন, ‘সামনেই লোকসভা নির্বাচন। দু’তিন মাস পর নতুন সরকার আসতে চলেছে। এই সময় রাজনৈতিক ভাবে বিরোধীদের জব্দ করতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। এমন আচরণ বন্ধ হওয়া উচিত।’ তাঁর অভিযোগ, উড়িষ্যাতেও একইভাবে ভোটের মুখে সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে এক বিচারকের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের কথায়, ‘গোটা দেশে কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে। যে রাজ্যে বিজেপির পা রাখার ক্ষমতা নেই, সেখানেই সিবিআইকে কে ব্যবহার করছে মোদী-শাহ জুটি।’ আরজেডি নেতা জয়প্রকাশ যাদব বলেছেন, ‘বাংলায় গণতন্ত্র ধ্বংস করছে বিজেপি সরকার। লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে একইভাবে সিবিআইকে কাজে লাগিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।’ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে। তাঁর কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী আমাদের গর্ব। দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যা ঘটেছে তা অগণতান্ত্রিক।’
আবার তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার অভিযোগ তোলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদে ডেকে পাঠিয়ে জবাব চাওয়ার দাবি জানান তিনি। বলেন, ‘১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহ্বানে ২৩ দলের উপস্থিতি দেখে মোদী-শাহরা ভয় পেয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে সিবিআইকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আছে। আদালতের নির্দেশ, ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না। এরপরেও কোন যুক্তিতে রাতের অন্ধকারে ৪০ জন সিবিআই অফিসার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে হানা দিয়েছিল?’ গতকাল বিরোধীদের তরফে এমনই সমালোচনার ঝড় ওঠায় দফায় দফায় অধিবেশন স্থগিত করতে বাধ্য হন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।