এনডিএ শরিক নীতিশ কুমার আগেই জানিয়েছিলেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করবেন তিনি। তবে শুধু নীতিশের দল-ই নয়, বিজেপির মাথাব্যথা বাড়িয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জেডিইউ-সহ উত্তর-পূর্বের মোট ১০টি আঞ্চলিক দল। এদের অধিকাংশই বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ-এর জোটশরিক।
মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে একটি সম্মেলনে একত্রিত হয়েছিলেন পর একযোগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১০ দলের জোট। উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপির নেতৃত্বে যে কংগ্রেস বিরোধী জোট তৈরি করা হয়েছিল, সেই জোটের ৮টি দলই হাজির ছিল এই সম্মেলনে। আর প্রতিটি দলই এই সম্মেলনে ‘নাগরিকত্ব বিল’-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি নাগরিকত্ব বিলকে ‘সাম্প্রদায়িক বিল’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে এই সম্মেলনে। এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মেঘালয়, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রীরাও। বিহারের জনতা দল (ইউনাইটেড)-ও এই সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জানুয়ারি লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬ পাশ করানো হয়েছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় হিংসার শিকার হয়ে যে অমুসলিম মানুষেরা ভারতে আসবেন, সেই সব শরণার্থীদের আশ্রয় দিতেই এই বিল নিয়ে এসেছে কেন্দ্র। এই বিলের বিরুদ্ধে একজোট হতেই গুয়াহাটিতে একসঙ্গে আলোচনায় বসেছিল অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরার রাজনৈতিক দলগুলি। রাজ্যসভায় যাতে এই বিল পাশ না হয় সেই জন্যই এই প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বিলের প্রতিবাদে আগেই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে অসম গণ পরিষদ। আর গতকালের সম্মেলনে উপস্থিত ছিল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টি, পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, নাগা পিপলস ফ্রন্ট-সহ অন্যান্য দল। নিজেদের মধ্যে বৈঠক শেষে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরমথঙ্গা জানিয়েছেন, ‘আমরা এক যোগে এই বিলের বিরোধিতা করছি। এই বিল কার্যকর হলে আসামের মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়বে। আসাম সংলগ্ন পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতেও এর প্রভাব থাকবে।’
আবার মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বলেন, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থানের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে উত্তর-পূর্বের ১০টি রাজনৈতিক দল এবং বিজেপির জোটসঙ্গী জেডিইউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই বিলের বিরোধিতা করা হবে। একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে এই বিল বাতিল করার জন্য। কারণ এই বিলের ফলে মানুষের জীবন ও পরিচয় ক্ষতির মুখে পড়বে।’ দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট। তার আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় বিজেপির শরিকদলগুলির জোট বাঁধা মোদী-শাহর রক্তচাপ বাড়ানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।