এবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে আইনি নোটিস পাঠাল তৃণমূল। বিজেপির রাজ্য দফতরে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে সেই নোটিস। যেটি পাঠিয়েছেন মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ওই নোটিসে বলা হয়েছে, ‘কাঁথির জনসভা থেকে প্রকাশ্যে অমিত শাহ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেয় করার চেষ্টা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি ঘিরে অমিত শাহ যে কোটি কোটি টাকা উপার্জনের কথা বলেছেন, তা অর্থহীন, উদ্দেশ্যমূলক এবং সর্বৈব মিথ্যা।’
প্রসঙ্গত, গতকাল কাঁথির সভায় দাঁড়িয়ে একের পর এক মন্তব্য করে মমতাকে হেয় করার চেষ্টা করেন অমিত শাহ। তাঁর মানহানি করতে তিনি এমন ভিত্তিহীন অভিযোগও করেন যে, ‘ছবি বিক্রির নামে চিটফান্ডের কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ বিজেপি সভাপতির করা এমন অপমানকর মন্তব্যেরই তীব্র প্রতিবাদ করেন ক্ষুব্ধ চন্দ্রিমা।
নোটিসে বলা হয়েছে, ‘আপনি যে কথা বলেছেন, তার সপক্ষে আপনার হাতে কোনও তথ্য নেই। আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই, ছবি বিক্রি থেকে যে আয় হয়েছে, তা আয়কর দফতর, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সমস্ত সংস্থাকেই জানানো হয়েছে নিয়ম মেনে। সেই সমস্ত সংস্থা তা খতিয়েও দেখেছে। এ প্রসঙ্গে আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের দলের চেয়ারপার্সনের অ্যাকাউন্টে কোনও কানাকড়িও নেই। তাই আপনার বক্তব্য, যা আপনি জনসভায় বলেছেন, তা একেবারেই ভিত্তিহীন, অসত্য, মিথ্যা এবং তা প্রমাণহীন। আপনার বক্তব্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার পাশাপাশি উদ্দেশ্যমূলকভাবে দলকেও হেয় করা হয়েছে।’
ওই নোটিসে চন্দ্রিমা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘এ ব্যাপারে আমি আপনাকে জানাতে চাই, হয় আপনার বক্তব্যের সপক্ষে আপনি প্রমাণ দিন, অথবা জনসমক্ষে আপনার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান। অন্যথায় দলের পক্ষ থেকে উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ করার পথেই হাঁটতে হবে। এবং যেজন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন।’ আসলে মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করতেই যে এ কাজ করেছেন বিজেপি সভাপতি তা স্পষ্ট। তাই এমন মিথ্যে অভিযোগ করার জন্য শাহকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে সবার সামনে, এমনই দাবি জানিয়েছেন চন্দ্রিমা। আর শাহ যদি ক্ষমা না চান, তাহলে পরবর্তীকালে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনও শাহর তোলা একাধিক মিথ্যে অভিযোগের প্রতিবাদ করে ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘অমিত শাহ ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি ভারতের কেন, বাংলার সংস্কৃতিও জানেন না। বেটি বাঁচাও-এর দু’বছর আগে থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেন। কন্যাশ্রীতে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। যেখানে বেটি বাঁচাও-তে মাত্র ৬৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।’
ডেরেক নোটবন্দী, জিএসটির মতো একাধিক ইস্যু নিয়ে শাহকে আক্রমণ করেছেন। এমনকি শাহর ছেলের প্রসঙ্গ তুলেও তাঁকে বিঁধতে ছাড়েননি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘নির্মল বাংলা মোটেই স্বচ্ছ ভারতের অনুকরণ নয়। ২০১৩-য় নদীয়া নির্মল বাংলায় প্রথম হয়। এখানে এখন উৎপাদন অনেক বেড়েছে। শিল্পেও অনেক এগিয়ে বাংলা। অমিত শাহ বোধহয় এটাও জানেন না যে, এখানে ৩০ হাজার দুর্গাপুজো হয়। ১০ হাজার স্কুলে সরস্বতী পুজো হয়। তৃণমূল বরাবরই মানুষের সঙ্গে আছে।’