বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে, খাজনার চেয়ে বাজনার বেশি। ঠিক তেমনটাই ঘটল মোদীর সাধের প্রকল্পের ক্ষেত্রে। সরকার গঠনের বছরখানেকের মাথায় শিশুকন্যাদের স্বার্থে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরষ্কার জয়ী প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’র আদলে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তবে সরকারের মেয়াদ পূর্তির শেষ সময়ে সেই প্রকল্প নিয়েই সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ কেন্দ্র সরকারের তরফে লোকসভায় দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে যে, প্রকল্প বাস্তবায়নের থেকে নাকি প্রচারেই বেশি নজর ছিল মোদীর৷ আর তার জেরেই এই প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের ৫৬ শতাংশই প্রচারের উদ্দেশ্যে খরচ করেছে মোদী সরকার৷
এখনও আমাদের দেশে কন্যাসন্তানরা অবহেলিত৷ এখনও তারা অনেকক্ষেত্রেই পরিবারের বোঝা হিসাবে গণ্য হয়৷ এমনকি শিক্ষালাভের অধিকার থেকেও অনেক সময় বঞ্চিত থেকে যায় তারা। এমন লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে, এবং পিছিয়ে পড়া মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিতেই ২০১৩ সালে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সূচনা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। যা পরে বিশ্ব সংস্থা ইউনিসেফের তরফে পায় সেরা প্রকল্পের শিরোপা। কন্যাশ্রীর সাফল্য দেখেই ২০১৫ সালে ওই একই ধাঁচে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সূচনা করেন মোদী। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ওপর৷
গত ৪ জানুয়ারি নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী বীরেন্দ্র কুমার লোকসভায় জানিয়েছেন, বিগত কয়েকবছরে এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের তরফে ৬৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ যার মধ্যে ৫৬.২৭ শতাংশ অর্থাৎ ৩৬৪.৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে প্রকল্পের বিজ্ঞাপনে! এছাড়াও ২৪.৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫৯.১৮ কোটি টাকা বিভিন্ন রাজ্যে প্রকল্পের স্বার্থে ব্যয় করা হয়েছে! বছরভিত্তিক যে তথ্য লোকসভায় পেশ করা হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২৮০ কোটি টাকা৷ যার মধ্যে প্রচার ও বিজ্ঞাপনের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৫৫.৭১ কোটি টাকা৷ বিভিন্ন রাজ্যে প্রকল্প খাতে বরাদ্দ ছিল ৭০.৬৩ কোটি টাকা৷ বাকি ৫৩.৬৬ কোটি টাকা এখনও সরকারের হাতেই রয়েছে৷
আবার এর আগের অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০১৭-২০১৮ সালে এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল মোট ২০০ কোটি টাকা৷ সে বছরও প্রচারকাজে খরচ হয়েছে ১৩৫.৭১ কোটি টাকা৷ এই একই পরিস্থিতি ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষেও৷ ওই বছর বরাদ্দ অর্থের ২৯.৭৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল প্রচারে৷ মাত্র ২.৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল প্রকল্পের বাস্তবায়নে৷ এই খতিয়ান সামনে আসার পরই তা নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়৷ প্রকল্প যতটা না বাস্তবায়িত হয়েছে তার চেয়ে বেশি প্রচারেই মোদী সরকারের নজর ছিল বলেই কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা৷ বিরোধীদের দাবি, খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হওয়াতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প৷ কারণ কথায় বলে, যে মেঘ গর্জায় বেশি, সে মেঘ বর্ষায় না। সেই একই অবস্থা এখন মোদী এবং তাঁর প্রচার সর্বস্ব সরকারের।