৩৪ বছরের বাম আমলে অবহেলায় পড়েছিল কোদালিয়ায় নেতাজির পৈতৃক বাসভবন। সরকার পরির্বতন হতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল সংস্কার কাজ। এবং তা পুরনো ঐতিহ্য বজায় রেখেই। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে কাজ চলার পর শেষ হল বাড়ির সংস্কারের কাজ। সোমবার থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে নেতাজির পৈতৃক এই বাসভবন।
প্রায় দু’শো বছর আগে কটক থেকে এসে কলকাতার অদূরেই সোনারপুরের কোদালিয়ার চাংড়িপোতায় চলে আসেন নেতাজির দাদু হরনাথ বসু৷ ওই এলাকায় জায়গা কিনে বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর৷ জমি কিনলেও, বাড়ি তৈরি করতে পারেননি তিনি৷ বাবার শেষ ইচ্ছাপূরণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন নেতাজির বাবা জানকীনাথ বসু৷ সেখানেই তৈরি করেন বাড়ি৷
নেতাজির এই পৈতৃক বাড়িতে আছে উপর ও নিচে মিলিয়ে মোট আটটি ঘর। রয়েছে ধানের গোলা। পুজোর দালান। নেতাজির বাবার তৈরি বীণাপানি লাইব্রেরি৷ পাকাপাকিভাবে না হলেও, মাঝেমধ্যেই ওই বাড়িতে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসতেন জানকীনাথ বসু৷ প্রতি বছর দুর্গাপুজোতেও অষ্টমীর দিন অঞ্জলি দিতে এই বাড়িতেই আসতেন নেতাজি। এই বাড়ির পুকুরপাড়ে এলাকার বিপ্লবীদের নিয়ে বিভিন্ন সময় সভাও করেছেন তিনি। ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি বয়সের ভারে হয়ে পড়েছিল ন্যুব্জ৷ তবে অবহেলায় পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে নাট্যশালা-সহ বেশ কিছু উপকরণ।
জানা গেছে, বাম আমলে এই বাড়িটির সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি৷ তবে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালের ২২ শে জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নজরে আসে নেতাজির কোদালিয়ার বাড়ির ভগ্নদশা৷ তখনই বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়৷ বসু পরিবারের সম্মতি নিয়ে ২০১৫ সালে বাড়িটি সংস্কারের কাজ শুরু করেন হেরিটেজ কমিশনের কর্মীরা। পাঁচবছর ধরে চলে সংস্কারের কাজ৷ নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে সাধারণের জন্য সোমবার থেকেই খুলে গেল ওই বাড়ির দরজা৷
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, ‘গত কয়েকবছরে এই বাড়িটিকে যত্ন করে সংস্কার করা হয়েছে৷ নেতাজির ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে তাই গড়ে উঠেছে নেতাজি কৃষ্টি কেন্দ্র। এবার পর্যটকদের জন্য এই বাড়িতেই একটি গেস্ট হাউস তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।’ রাজ্যের আশা, শুধু নতুন প্রজন্মই নয়, নেতাজির অনুরাগীরাও কোদালিয়ার বাড়িটি দেখে খুশি হবেন৷ আগামী দিনে নেতাজির এই বাড়িটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে চায় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ভগ্নপ্রায় বাসভবনটিকে আবার আবারও সাজিয়ে তোলা গেছে। এ জন্য তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন এলাকার মানুষ।