মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে বাংলা দেখল কীভাবে একই মঞ্চে এসে সব রং মিলেমিশে এক হয়ে গেল৷ কার্যত প্রায় গোটা বাংলাই কাল হাজির ছিল ঐতিহাসিক ব্রিগেড সমাবেশে৷ সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়েছিল শহরের রাস্তায়৷ আর এই বানভাসি জনজোয়ারকে নিপুণ ভাবে সামলে আবারও নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিল পুলিশ৷
শনিবারের মিছিলের যে দিকটি কলকাতাবাসীর সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে তা হল, সভাশেষে কোথাও যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথ আটকে থাকেনি। এমনকি দূর–দূরান্ত থেকে আসা বাস বোঝাই কর্মী–সমর্থকদের নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি রাখার পর তাঁদের সমাবেশস্থলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা এবং তাঁদের আবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ একেবারে সফলভাবে করে দেখিয়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। স্পেশাল টাস্ক ফোর্স প্রায় দু’মাসের বেশি সময় ধরে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে নজরদারি চালিয়েছে। যাতে সমাবেশের আগে বা পরে কেউ কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে। নজরদারির পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনী এতটাই তৎপর ছিল, যে কারণে ব্রিগেডের সমাবেশ এতটাই সফল।
স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে অভিজ্ঞ গোয়েন্দাদের নিয়ে বিশেষ বাহিনী হয়েছিল। স্নাইপার রাইফেল নিয়ে বিভিন্ন হাইরাইজ থেকে মাঠের চারদিকে নজরদারি চালিয়েছে কমান্ডো বাহিনী। একসময় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে গাড়ি ও বাসের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। পার্ক সার্কাস, পার্ক স্ট্রিট এবং অন্যান্য রাস্তা দিয়ে সেই গাড়িগুলি ঘুরিয়ে ব্রিগেডের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়। যে কারণে ছুটির দিন হলেও, এত বড় সমাবেশের পরেও কলকাতা ছিল সচল ও স্বাভাবিক।
প্রায় এক মাসের বেশি প্রস্তুতি ছিল। দফায় দফায় মিটিং করেছেন লালবাজারের পদস্থ কর্তারা। শীর্ষ নেতৃত্বে খোদ নগরপাল রাজীব কুমার। তাঁর সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের একসময়ের উপনগরপাল (সদর), গোয়েন্দাপ্রধান এবং উপনগরপাল (পরিযান)–এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলে এখন অতিরিক্ত নগরপাল (১) জাভেদ শামিম৷ মূলত এঁদের নিখুঁত পরিকল্পনাতেই এত বড় সমাবেশ, লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হওয়া এবং কোথাও কোনও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ব্রিগেড সমাবেশের দিন যত এগিয়ে এসেছে, সমস্ত ডিভিশনের উপনগরপাল এবং থানার ওসি–দের কী দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। ব্রিগেডের হাইপ্রোফাইল সমাবেশ নিখুঁত সামাল দিয়ে, শনিবার বিকেলে শেষ হাসি হাসল কলকাতা পুলিশ।