তৃতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরই বাংলাকে আরও শিল্পবান্ধব করে তোলার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতোই নানান তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার। পাশপাশি, মমতার আমলেই শ্রমিক কল্যাণে অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটিয়েছে রাজ্য। শুধু সরকারি কর্মচারী নয়, বেসরকারি শ্রমিক-কর্মচারী ও অসংগঠিত শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের যুক্ত করা হয়েছে সুরক্ষা যোজনায়। ইতিমধ্যে শ্রমিক কল্যাণে সরকার ব্যয় করেছে ২৪২১ কোটি টাকা। তথ্য-পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে বেসরকারি শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ১৩ শতাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের জন্য বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাম আমলে প্রতিমাসে কিছু টাকা দিতে হত। তবেই মিলত সুরক্ষা। কিন্তু তৃণমূল সরকার তাঁদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেয় না। নিজের খরচেই ওই শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করেছে নবান্ন। শ্রমিকদের জন্য একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছেন মমতা। পূর্বতন বাম জমানায় প্রত্যেক অসংগঠিত শ্রমিককে মাসে ২৫ টাকা দিতে হত আর সরকার দিত ৩০ টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেকের নামে পিএফে মোট ৫৫ টাকা জমা পড়ত। আর এখন তৃণমূল সরকার পুরোটাই নিজেরা দেয়। তাই সামাজিক সুরক্ষা যোজনা মেলে বিনামূল্যেই।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের আমলে উপভোক্তাদের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তাঁদের কাছে যাওয়া টাকার পরিমাণও কয়েকশো গুণ হয়েছে। ২০০১-১১ সাল অর্থাৎ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রে ২৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে নাম লেখান। তাতে উপকৃতের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৪,৬৩০। তাঁদের জন্য প্রদত্ত টাকার পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ২৫ লক্ষ ২০ হাজার ২৭৫৷ ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ২০২৪-এর ৩১ মে অবধি এই প্রকল্পে নাম লিখিয়েছেন ১ কোটি ৬৮ লক্ষ মানুষ। উপকৃত হয়েছেন ৩৩ লক্ষ ৯৫ হাজার। এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে মোট ২,৪২১ কোটি টাকা। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ও আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অসংগঠিত ক্ষেত্রের অসংখ্য মানুষ কার্যত বঞ্চিত ও উপেক্ষিত ছিলেন বাম আমলে। এখন তাঁরা উপকৃত হচ্ছেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের পাশে থাকছে রাজ্যের মা-মাটি-মানুষের সরকার। বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনার আওতায় এসেছে বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়ন, মৎস্যজীবী ইউনিয়ন, তাঁত শ্রমিক কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ও নির্মাণ কর্মী ইউনিয়ন। ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্সদেরও শামিল করা হয়েছে এই যোজনায়। সকলের স্বার্থে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের পাশে রয়েছে রাজ্য। কেউ যেন পিছিয়ে না থাকেন, সেটিই মূল লক্ষ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের।