দুদিন পরেই কালীপুজো। শ্যামার আরাধনার আবহে আলোর উৎসবে মেতে উঠবে সারা বাংলা। আজ জেনে নেওয়া যাক হুগলির সিঙ্গুরের বিখ্যাত ডাকাতকালী পুজোর ইতিহাস সম্বন্ধে। এই পুজোর খ্যাতি রয়েছে গত ৫০০ বছরেরও বেশি সময় যাবৎ। দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমান ভক্তরা। অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর প্রস্তুতি। পুজোর প্রাচীন রীতিনীতি আজও মেনে চলা হয়। এখানে ডাকাতকালীর মন্দির থাকায় আশেপাশে কোনও বাড়িতে আর কালীপুজো হয় না। সিঙ্গুরের ডাকাতকালী মন্দিরের ইতিহাস ভীষণই রোমহর্ষক। ডাকাতকালী মন্দির উন্নয়ন কমিটির মদনমোহন কোলে জানান, অসুস্থ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে মা সারদা কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাবার পথে রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত মায়ের পথ আটকে দাঁড়ায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে। সেই সময় সারদাদেবীর মধ্যেই রক্তচক্ষু মা কালীর মুখ দেখতে পায় ডাকাতরা। ভুল বুঝতে পেরে মা সারদার কাছে ক্ষমা চায় ডাকাতদল। সন্ধ্যা নামায় সেই রাতে নিজেদে, আস্তানায় মা সারদাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ডাকাতরা। রাতে চাল কড়াই ভাজা খেতে দেওয়া হয় মা সারদাকে।
আজও সেই রীতি অনুসরণ করেই কালীপুজোর দিনে মায়ের নৈবেদ্যে চাল কড়াই ভাজা দেওয়া হয়। বর্ধমানের রাজার দান করা জমিতে তৈরি হয় এই ডাকাতকালী মন্দির। কালী পুজোর দিন চার প্রহরে চারবার পুজো ও ছাগ বলি হয়। এছাড়া প্রাচীন প্রথা মেনে কালীপুজোর দিন মায়ের প্রসাদ হিসাবে চাল, কড়াই ভাজা দেওয়া হয়। এছাড়া লুচি, পায়েস, ফল, খিচুড়ি, বিভিন্ন পদের ভাজা ও পোলাও দেওয়া হয়। কালীপুজোর দিন গঙ্গা থেকে গ্রামের তফসিলিভুক্ত পরিবারের আনা জল দিয়ে মায়ের ঘটের জল পালটানো হয়। বছরের এই একদিন ঘটের জল পালটানো হয় মন্দিরের দরজা বন্ধ করে। সেসময় মন্দিরের পুরোহিত ছাড়া কোনও মহিলা মন্দিরের ভিতর থাকতে পারে না। কালীপুজোর পরেরদিন খ্যানের পুজোর পর মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। মন্দিরে প্রতিদিন হয় নিত্য পুজো। পুরুষোত্তমপুর গ্রামে এই ডাকাতকালী মন্দির থাকার কারণে আশেপাশের জামিনবেরিয়া, পুরষোত্তমপুর ও মল্লিকপুর গ্রামে কোনও বাড়িতে কালীপুজো হয় না। বৈদ্যবাটী-তারকেশ্বর রোডের পাশে পুরুষোত্তমপুর এলাকায় এই ডাকাতকালী মন্দির। হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার সিঙ্গুর রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে অথবা টোটোয় চেপে পৌঁছে যাওয়া যায় মন্দিরে।