বাংলার ফের ধর্মীয় মেরুকরণের তাস খেলতে চলেছে পদ্মশিবির। এবার ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’-এর কাণ্ডকে বাংলার মানুষের স্মৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়ার ছক কষছে বঙ্গ বিজেপি। দলের সাংস্কৃতিক শাখা এই নিয়ে একটি চলচ্চিত্র বানাতে উদ্যোগী হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষাবিদদের মতে, খুঁচিয়ে ঘা তৈরি করতেই এমন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিজেপি সূত্রে খবর, ‘কাশ্মীর ফাইলস’এর পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী ছবিটি পরিচালনা করতে পারেন। তবে ছবিটির নাম ‘বেঙ্গল স্টোরি’ হবে কি না, সেই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। দলের সাংস্কৃতিক শাখার আহ্বায়ক হওয়ার পর থেকেই রুদ্রনীল ঘোষ দলকে বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এই উদ্যোগের নবতম সংযোজন এই ফিল্মের ভাবনা। প্রসঙ্গত, ১২ই মার্চ কলকাতা জাদুঘরে কেন্দ্রীয় তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহযোগিতায় একটি ‘অরাজনৈতিক’ সংস্থার অনুষ্ঠানে এসে বিবেক ‘কাশ্মীর ফাইলস’এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাংলার গল্প তৈরির ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন।
স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে, দু’টি প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। এক, হঠাৎ ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’কে বাংলার মানুষের স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনতে কেন উদ্যোগী হল বিজেপি? দুই, এই স্মৃতি ফিরিয়ে এনে অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে তারা? ইতিহাসবিদ এবং প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু এই উদ্যোগকে ‘বিজেপির ঘোষিত রাজনৈতিক কৌশল’ ছাড়া আর কিছু মনে করেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘৪৬-এর ঘটনা নিয়ে চর্চা হতেই পারে। কিন্তু বিজেপির তথাকথিত সাংস্কৃতিক শাখা যা করতে চাইছে বলেশুনছি তাতে এটা পরিষ্কার, তাদের লক্ষ্য নির্দিষ্ট ভাবে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের বিষ ছড়িয়ে দেওয়া। সেই জন্য এক দিকে যেমন সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, অন্য দিকে তেমনই সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে যাতে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত বা প্রভাবিত করে কেউ কোনও অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না পারে।’’ সরব হয়েছেন তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়ও। “যে ভাবে কাশ্মীর ফাইলস, কেরল স্টোরি বানিয়েছে, তেমনই একটি প্রচেষ্টা। যে রাজ্যগুলি বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, সেখানে অশান্তি ছড়াতেই এই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেই সময় শুধু কলকাতাতেই হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে অন্তত ১০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বেলেঘাটায় অনশন করেছিলেন। সেই থেকে বাংলার মানুষ আর কখনও সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি। এটা মনে রাখা উচিত”, স্পষ্ট বক্তব্য তাঁর।