আগামী কাল ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস। মঙ্গলবার একুশে পা দিতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠিত এই দল। তবে দলের জন্মদিন উদযাপনে এবার বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে ব্রিগেড সমাবেশের প্রচার। যদিও প্রতি ব্লকে ঘাসফুল পতাকা তুলে প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হবে। থাকছে রক্তদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মতো নানাবিধ সামাজিক কর্মসূচির আয়োজন। এসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে আগামী ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের মা-মাটি-মানুষের মহাসমাবেশ। তাই জন্মদিন উদযাপনের মোড়কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা ওই জনসভার প্রচারই প্রাধান্য পেতে চলেছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। প্রসঙ্গত, একুশ বছরে এই নিয়ে তৃতীয়বার ব্রিগেডে জনসভা করতে চলেছে তৃণমূল।
রাজ্য কংগ্রেস ভেঙে ১৯৯৮ সালের প্রথম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলের জন্মদিন ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে মমতার ভূমিকা আলাদা ছাপ ফেলেছিল। একাধিকবার কেন্দ্রের শাসক মোর্চার শরিক হয়ে তিনি নিজে তো বটেই, সতীর্থদের নিয়ে মন্ত্রিসভাতে যোগ দিয়েছেন। এনডিএ থেকে দ্বিতীয় ইউপিএ কাউকেই নীতিগত প্রশ্নে রেয়াত করেনি তৃণমূল। কেন্দ্রীয় রাজনীতির পাশাপাশি বাংলার ঘরোয়া আবহে সিঙ্গুর, ভাঙড়, নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে জাতীয় স্তরে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল মমতার দল। সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি ফেরতের দাবিতে ২০০৬ সালে ২৭ দিন অনশন করেন মমতা। ভাঙড়, সিঙ্গুরের পর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জেরে ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন বদলে নতুন আইন তৈরি করতে বাধ্য হয় ইউপিএ সরকার। মমতার অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনের অভিঘাত গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছিল সেদিন। প্রধানত মমতার সেই আন্দোলনের সুবাদেই রাজ্যে সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনের অবসান ঘটেছিল।
বাংলার মসনদে পালাবদলের পর আট বছর পার হতে চলেছে। ক্ষমতায় বসেই তৃণমূল নেত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ‘বদলা নয় বদল চাই।’ সমাজের সর্বস্তরে সেই বদলই এখন একুশে পা দেওয়া তৃণমূলের অন্যতম রাজনৈতিক অস্ত্র।উন্নয়নের হাত ধরে তৃণমূল স্তরের মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াটাই মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য। কন্যাশ্রী প্রকল্প ইতিমধ্যেই বিশ্বের দরবারে সাড়া ফেলে দিয়েছে। একশা দিনের কাজে শ্রমদিবস তৈরিতে কিংবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগে গোটা দেশে নজির হয়ে উঠেছে বাংলার তৃণমূল সরকার।
একথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকারও। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষা রিপোর্টেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাকে সেরার তকমা দেওয়া হয়েছে। মমতার সরকারের গুণগাথা লেখা হয়েছিল রিপোর্টের প্রতি পাতায় পাতায়। সমীক্ষা রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সাফল্যের কথা।কেন্দ্রের রিপোর্টেই গ্রামীণ প্রশাসন পরিচালনা থেকে শুরু করে স্বরোজগারের প্রক্রিয়া বৃদ্ধিতে বাংলার সরকারের বিশেষ উন্নতির কথা বলা হয়ছিল। তারপর ভূমি রাজস্ব ও জমি সংক্রান্ত খাজনা আদায়ে দেশের সেরা রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। আর্থিক কমিশনের সুপারিশ গ্রহণেও পশ্চিমবঙ্গ উপরের দিকে রয়েছে। পানীয় জল প্রাপ্তীরে ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ অগ্রগণ্য। পশ্চিমবঙ্গে ৯১ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল পেয়ে থাকেন। সাক্ষরতা থেকে শিশুমৃত্যুর হারেও রাজ্য যথেষ্ট উন্নতি করেছে।
একদিকে সামাজিক উন্নয়ন, অন্যদিকে কেন্দ্রের বিজেপির সরকারের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে সর্বভারতীয় স্তরেও নজর কেড়েছেন তৃণমূল নেত্রী। নোট বাতিল থেকে জিএসটি, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ থেকে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে দেশের সমস্ত অবিজেপি শক্তিকে এক মঞ্চে আনতে সচেষ্ট মমতা। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধী জেহাদের মুখ হয়ে উঠেছেন মমতা। এই আবহে ব্রিগেডের জনসভার গুরুত্ব বাড়ছে। তাই রাজ্যে তো বটেই জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতেও এই ব্রিগেড সমাবেশের গুরুত্ব অপরিসীম।