বাংলার ধুঁকতে থাকা চটশিল্পকে বাঁচাতে এবার এগিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বছর কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রকল্পে রাজ্যের প্রয়োজনীয় চাল কেনার ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ চটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সব বস্তাই এ রাজ্যের চটকলগুলি থেকে কেনারও নিদান দিয়েছেন তিনি।
গোটা দেশজুড়েই চটের বস্তার ব্যবহার ক্রমশ কমে আসায় রাজ্যের জুটমিলগুলির অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ সময়ই চটকলগুলিকে নিজেদের আর্থিক অবস্থা সামাল দিতে মাঝেমধ্যেই কারখানার ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে উপযুক্ত পরিমাণ অর্ডার না থাকায় ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে না শ্রমিকরা। ফলে সার্বিকভাবে রাজ্যের পাটশিল্পে বেশ কিছু কাল ধরেই সঙ্কট চলছে।
রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বারংবার এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কেন্দ্রের তরফে তেমন উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া মেলেনি। তাই এমন ভয়াবহ অবস্থা সামাল দিতে আসরে নেমেছে রাজ্যই। মুখ্যমন্ত্রী বারবারই পরিবেশ বান্ধব চটের বস্তার পক্ষে সওয়াল করেছেন। অবশেষে তাঁর নির্দেশ মেনেই খাদ্য দফতর এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সংস্থা জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া তথা জেসিআইয়ের সঙ্গে সম্প্রতি একটি চুক্তি করেছে। জানা গেছে, চটের বস্তা কেনার জন্য রাজ্য এবার ১০০ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ করবে।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের কথা জানিয়ে বলেন, এবার সব মিলিয়ে আমাদের অন্তত ৭ কোটি চটের বস্তা লাগবে। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট ৫২ লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রাজ্য সরকার ও তার এজেন্সিগুলি সংগ্রহ করবে ৪৬ লক্ষ টন। বাকি ৬ লক্ষ টন সংগ্রহের জন্য বলা হয়েছে ফুড কর্পোরেশনকে। তারা যদি তা না পারে, তাহলে শেষ পর্যন্ত সেটাও রাজ্যকেই করতে হবে।
মন্ত্রী জানান, ৪৬ লক্ষ টনের জন্য প্রয়োজন হবে ৬ কোটি ৩৫ লক্ষ বস্তা। আর ৫২ লক্ষ টনের জন্য দরকার হবে সাত কোটি বস্তা। রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য যে সওয়া দু’কোটি বস্তার দরকার হবে, তার পুরো দামই আমরা দেব। আর বাকি পৌনে পাঁচ কোটির জন্য বস্তা পিছু ১ টাকা ৫৬ পয়সা ভর্তুকিও গুনবে রাজ্য।
তিনি আরও বলেন, এবার জেসিআই প্রতিটি বস্তার দাম ধার্য করেছে ৪৮ টাকা ৯৬ পয়সা। এর মধ্যে কেন্দ্রের প্রকল্পের জন্য দিল্লি বস্তা পিছু ৪৭ টাকা ৪০ পয়সা বরাদ্দ করেছে। সেই কারণে বাকি অংশ রাজ্যকে ভর্তুকি দিতে হবে। আর রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য বস্তার পুরো দামই দিতে হবে আমাদের। এই সব হিসেব মিলিয়ে বস্তা বাবদ ১০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করতে হবে আমাদের।
জানা গেছে, রাজ্যের পাটচাষি ও চটকল শ্রমিক এবং মালিকদের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী এই উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জেসিআইকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলার চটকলগুলি থেকেই বস্তা কিনতে হবে। এজন্য আমরা বিশেষ নজরদারি টিম তৈরি করেছি।
অন্যদিকে, ধান সংগ্রহের কাজ আরও দ্রুতগতিতে করার জন্য খাদ্য দফতর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো কৃষকদের হাতে ধান বিক্রির টাকা দ্রুত দেওয়ার জন্য জেলা প্রতি এক লক্ষ ব্ল্যাঙ্ক চেক পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই চেকগুলিতে কৃষক পিছু সর্বোচ্চ ৪৫ কুইন্টাল ধানের দাম দেওয়া যাবে। ফড়েদের দৌরাত্ম্য কমাতেই এই কড়াকড়ি করা হয়েছে এবার।
মন্ত্রী জানান, ধান ক্রয়কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় পঞ্চায়েতভিত্তিক আরও এক হাজার বিশেষ ধান সংগ্রহ শিবির খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এই শিবিরগুলির জন্য কম্পিউটার জানেন এমন দু’হাজার অস্থায়ী কর্মীকে নিয়োগ করা হবে। এই কর্মীদের মাসে সাড়ে ১১ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে।