বাঙালি বরাবরই মিষ্টিপ্রেমী আর রসগোল্লার সাথে সম্পর্কটা বাঙালির একটু বেশিই মধুর। তাই প্রিয় মিষ্টির জিআই পাওয়া নিয়ে উড়িষ্যার সাথে ধুন্ধুমার লড়াইতে জয়ের মুকুট বাংলার মাথাতেই উঠেছিল। সেই রসগোল্লার ১৫০ বছর পূর্তিতে এবং কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ইতিহাসে ঐতিহ্যপূর্ণ বাগবাজারের অবদান তুলে ধরতে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে শুক্রবার উত্তর কলকাতার গৌরীমাতা উদ্যানে প্রথম বাগবাজার রসগোল্লা উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হল। মঙ্গলপ্রদীপ জ্বেলে উৎসবের উদ্বোধন করেন কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। প্রতিদিন বিকেল ৩টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে উৎসব প্রাঙ্গণ। সঙ্গীত, শ্রুতিনাটক, সুফি মিউজিক, বাংলা ব্যান্ড, তারকাদের আড্ডা, রান্না, রসগোল্লা খাওয়ার প্রতিযোগিতা-সহ আরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হবে এই উৎসব। কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই উৎসবে থাকছে ৩০টি স্টল যেখানে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ধরণের রসগোল্লা।
শুক্রবার গৌরীমাতা উদ্যানে রাজনীতিবিদ থেকে শিল্প-সংস্কৃতি জগতের কলাকুশলীদের নিয়ে যেন চাঁদের হাট বসেছিল। অনুষ্ঠানে ছিলেন সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির আচার্য সত্যম রায়চৌধুরী, মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার, শিল্পী শুভাপ্রসন্ন, সঙ্গীতশিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পোস্টমাস্টার জেনারেল জে চারুকেশী, কে সি দাশের কর্ণধার ও উৎসব কমিটির কোষাধ্যক্ষ ধীমান দাশ-সহ বহু বিশিষ্টরা। ওই উদ্যানের পাশেই রসগোল্লোর ‘কলম্বাস’ নবীনচন্দ্র দাসের একটি আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন হয় হরেকৃষ্ণ হালদার ও সম্প্রদায়ের খোল বাদনের মাধ্যমে। প্রকাশ করা হয় নবীনচন্দ্রের ছবি সহ বিশেষ ডাকটিকিটও। এছাড়া প্রকাশ করা হয় বিশেষ স্মারক গ্রন্থ। কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘রসগোল্লার সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে। কৃষ্টি-সংস্কৃতির পীঠস্থান উত্তর কলকাতা। বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে রসগোল্লা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’
ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘অনেক খাবারের মধ্যে কোনও একটি খাদ্য নিয়ে যে এত বড় উৎসব করা যায়, তা রসগোল্লা উৎসবেই প্রমাণিত।’ উৎসব কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা জানিয়েছেন, ‘সারদা মায়ের জন্মতিথিতে রসগোল্লা আবিষ্কারের ১৫০ বছর ও জিআই পাওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রসগোল্লা উৎসব শুরু করেছি। কলকাতা ও জেলার বিখ্যাত মিষ্টির স্টলও রয়েছে।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে ধরে রাখা দরকার। বাগবাজারের নিজস্ব পরিচয় আছে। এ ধরণের উৎসব সকলের মধ্যে আনন্দ পৌঁছে দিতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্প-সংস্কৃতি জগতকে যেভাবে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন, তা অতুলনীয়। সব মিলিয়ে এই উৎসব বাঙালি এবং রসগোল্লার সম্পর্কের মিষ্টতা আরও বাড়িয়ে তুলবে তা বলাই বাহুল্য।