বিপদ কখনও জানিয়ে আসে না। আর সেই কথার প্রমাণ কাল আবারও পেলেন মেট্রোর যাত্রীরা। ব্যস্ত দিনের শেষে রোজকার মতই বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে মেট্রো ধরেছিলেন তাঁরা। আচমকাই দেখা দিল এসি রেকে ধোঁয়া। গতকাল যাঁরা পাতালরেলে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, তাঁরাই জানেন পরিস্থিতি কী ছিল। মাত্র কয়েকদিন আগে লাইনে ফাটল ধরে। অফিস টাইমে চাঁদনি চক স্টেশনে মেট্রো বন্ধ ছিল।
প্রত্যেকদিন বহু মানুষ কাজের তাগিদে মেট্রোতে যাতায়াত করেন। কিন্তু এমন একটা দুর্ঘটনা মানুষকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্তব্ধ করে দেয়। পাতালপথে এসি বা নন এসি মেট্রো হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলে আতঙ্ক হওয়ারই কথা। গতকাল তিন ঘণ্টা মেট্রো চলাচল বন্ধ ছিল। পৌনে একঘণ্টা এসি রেকে আটকে ছিল যাত্রীরা। উদ্ধার হওয়ার পরেও আতঙ্ক থেকে বেরোতে পারেনি তারা। ভবিষ্যতে ফের এরকম দুর্ঘটনা ঘটলে কী করবেন! মেট্রো কর্তৃপক্ষ বা উদ্ধারকারী দল খবর পাওয়া পর্যন্ত আপনাকেই কিছু তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
১। এসি কোচ হোক বা নন এসি— মেট্রোয় বিপদের মুখোমুখি হলে প্রথমেই মাথা ঠান্ডা রাখুন। বিপদে পড়লে এই কাজটাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়ে, কিন্তু মাথা ঠান্ডা না রাখলে অকারণে প্রভাবিত হয়ে পড়া বা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ার মতো ঘটনার শিকার সহজে হন মানুষ। এতে কিন্তু বিপদের মাত্রা বাড়ে।
২।মোবাইলে মজুত রাখুন দমকল, মেট্রোর হেল্পলাইন, আরপিএফ ও মেট্রো রেল পুলিশের নম্বর। যাতে দরকারে তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করতে পারেন।
৩। মেট্রোয় তেমন সমস্যা এলে যদি একান্ত লাইনে নামতেই হয়, তা হলেও সতর্ক থাকুন। মেট্রোয় বিপদ ঘটলে তিন নম্বর ট্র্যাকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবু নামার সময় সেই ট্র্যাক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৪। মেট্রোয় আগুন লাগলে ফায়ার অ্যালার্ম ব্যবহার করুন। কী ভাবে তা ব্যবহার করতে হয়, তা ফায়ার অ্যালার্মের নিচে সংক্ষেপে লেখা থাকে।
৫। কাচ ভেঙে বেরোতে হতে পারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে আপদকালীন অবস্থায় ঠিক কতটুকু পদক্ষেপ করলেই উদ্ধার পাওয়া সম্ভব সেটা বুঝে নিন আগে। সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন।
৬। মেট্রোতে আটকে পড়লে হেল্পলাইন নম্বরের যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে থাকুন। ভাল করে মেট্রোর ঘোষণা শোনার চেষ্টা করুন। কারণ, মেট্রোর কোনও গণ্ডগোল ঠিক করা সাধারণ যাত্রীদের হাতে নেই। বাস নয়, যে নেমে ড্রাইভারের উপরে রাগ দেখাবেন। ট্রেনের মতো লাইনে বিক্ষোভ দেখানোর জায়গা নেই। তাই এটি এমন এক অবস্থা, যেখান থেকে বেঁচে ফেরাই বিভীষিকা। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে হেল্পলাইন, দমকল বা কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী বা মেট্রো কর্তৃপক্ষের সহায়তা না পেলে কোনও সমাধান হবে না।
মনে রাখবেন প্রত্যেকদিন রাস্তায় একাধিক বিপদ অপেক্ষা করে আছে। দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে উত্তেজিত মানুষের ভিড়ে না মিশে একটু তফাতে থাকুন। মাথা ঠান্ডা রাখুন। নিজের মতো উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগান। আপনার উত্তেজনা যেন আর পাঁচটা লোকের বিপদ ডেকে না আনে। সব সময় মাথায় রাখুন, আপনার পরিবারের কাছে আপনার জীবন ভীষণ মূল্যবান।