প্রমাণের অভাবে সোহরাবউদ্দিন শেখ এনকাউন্টার মামলায় অভিযুক্ত ২২ জনকেই শুক্রবারই বেকসুর খালাস করেছে মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত। সোহরাবউদ্দিনের বুলেটবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নিলেও অভিযুক্তরা যে সেই খুনের সঙ্গে জড়িত তার তথ্যপ্রমাণ না থাকাতেই এই রায় বলে জানিয়েছিলেন বিচারক এস জে শর্মা। এই ক্ষেত্রে তিনি যে অসহায়, রায় দেওয়ার সময় তাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তিনি। এবার এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে রাহুলের কটাক্ষ, সোহরাবউদ্দিন, ওঁর স্ত্রী কওসার বাঈ, বন্ধু তুলসীরাম প্রজাপতি এবং বিচারপতি লোয়াকে কেউ মারেনি। এঁরা প্রত্যেকে এমনি এমনিই মারা গিয়েছেন!
২০০৫-এর নভেম্বরে সোহরাবউদ্দিন শেখ খুন হওয়ার পর থেকেই এই মামলা হয়ে উঠেছিল দেশের অন্যতম হাইপ্রোফাইল মামলা। এর পরই ঘটতে থাকে একের পর এক খুন, প্রমাণ লোপাট, বিরূপ সাক্ষ্য, এমনকি খোদ বিচারপতির রহস্যজনক মৃত্যুর মতো ঘটনাও। প্রথমে এই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে নাম জড়িয়েছিল গুজরাতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপির বর্তমান সভাপতি অমিত শাহ-সহ মোট ৩৮ জনের নাম। যার মধ্যে ছিলেন রাজস্থান এবং গুজরাত পুলিশের একাধিক শীর্ষকর্তাও। পরে প্রমাণের অভাবে তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, সোহরাবউদ্দিন সেখ ও তার স্ত্রী কওসার বাঈকে হায়দ্রাবাদ থেকে মহারাষ্ট্রের সাংলি যাওয়ার পথে অপহরণ করে গুজরাট এটিএস। এরপর গান্ধী নগরের অদূরে একটি জায়গায় সোহরাবউদ্দিনকে খুন করা হয়। এবং এর দিন কয়েক পরেই কওসারকেও ধর্ষণ করে খুন করা হয়। অন্যদিকে, প্রায় এক বছর পর পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই ওই এনকাউন্টারের প্রত্যক্ষদর্শী ও সোহরাবউদ্দিনের সঙ্গী তুলসীরাম প্রজাপতি মারা যায় গুজরাটের বংশকাঁথা জেলায় ছাপরি গ্রামে। তাকেও ২০০৬ সালে এনকাউন্টারে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।
তবে এখানেই শেষ নয়। এই মামলার রায় দেওয়ার ঠিক আগে ২০১৪-র ডিসেম্বরে রহস্যজনক ভাবে খুন হয়ে যান এই মামলার দায়িত্বে থাকা বিচারপতি লোয়া। ২১০ জন সাক্ষীর মধ্যে প্রথমে দেওয়া বয়ান বদলে ফেলেন ৯২ জনই। এর পরই মামলায় দায়িত্ব নিয়ে বিচারক এম বি গোসাভি অমিত শাহ, রাজস্থানের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাবচাঁদ কাটারিয়া, গুজরাত পুলিশের সন্ত্রাস দমন বাহিনীর তদানীন্তন ডিআইজি ডি জি বানজারা-সহ ১৬ জনকে রেহাই দেন। বাকি ২২ অভিযুক্তকেও শুক্রবার বেকসুর খালাস করে দেন মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক এস জে শর্মা।
তবে শুক্রবার রায় দেওয়ার সময় নিজের অসহায় অবস্থার কথা জানিয়ে শর্মা বলেন, ‘তিন প্রধান সাক্ষী বয়ান বদলে ফেলেছেন। সরকারি আইনজীবীরা অভিযোগ প্রমাণ করতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সাক্ষীরা কথা না-বললে তাঁরা কী করবেন!’ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘সোহরাবউদ্দিন বুলেট-বিদ্ধ হয়েই মারা গিয়েছেন, ময়না-তদন্তে তা প্রমাণিত। কিন্তু অভিযুক্তদের মধ্যেই কেউ যে তাঁকে গুলি করেছিলেন, এর কোনও প্রমাণ নেই। পারিপার্শ্বিক প্রমাণ থাকলেও যথেষ্ট প্রমাণ নেই।’ এমনকি নিহতদের পরিবারের কাছে কার্যত ‘ক্ষমা’ চেয়ে নিয়ে বিচারক শর্মা বলেন, ‘আমার চাকরি জীবনের এটাই শেষ রায়। আমি তাই নিহতদের পরিবারের কাছে সত্যিই দুঃখপ্রকাশ করছি। কিন্তু যে সাক্ষী ও প্রমাণ পেশ করা হয়েছে, খুন ও ষড়যন্ত্র প্রমাণের পক্ষে তা যথেষ্ট নয়।’
কিন্তু তাতে কী? তাতে তো আর চুপ থাকবে না বিরোধীরা। কারণ প্রমাণ যে লোপাট হয়েছে সে ইঙ্গিত দিয়েছে সিবিআই-ই। আবার সাক্ষীরাও যে সাক্ষ্য বদলে ফেলেছে, তা জানিয়েছে খোদ বিচারকই। ফলে এতগুলি মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও সবাই বেকসুর খালাস পাওয়ায় তীব্র কটাক্ষ করেছেন রাহুল। টুইটারে তাঁর মন্তব্য, ‘হরেন পান্ডে, বিচারপতি লোয়া, তুলসীরাম প্রজাপতি, প্রকাশ থম্বড়ে, শ্রীকান্ত খান্ডালকর, কওসার বাঈ, সোহরাবউদ্দিন শেখ, এঁদের কেউ মারেনি। এঁরা এমনিই এমনিই মারা গিয়েছেন।’