আবারও মুখ পুড়ল কেন্দ্র সরকারের। সম্প্রতি সংসদে এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট দিয়েছে সংসদীয় কমিটি, যাতে বলা হয়েছে
দেশের আধা সামরিক বাহিনী চরম অবহেলা এবং সরকারি অব্যবস্থার শিকার। দেশের সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীতে (বিএসএফ) অসুস্থতার জেরে মৃত্যুর সংখ্যাও শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে শহীদের থেকে ঢের বেশি। এমনকি বরাদ্দ করা নির্দিষ্ট বাসস্থান, কিংবা পানীয় জল নিয়েও যথেষ্ট অসন্তোষ রয়েছে আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে।
সম্প্রতি লোকসভায় ওই রিপোর্ট পেশ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য কাকলি ঘোষ দস্তিদার। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আধা সামরিক বাহিনীর সরকারি অবহেলার শিকার হওয়ার ছবি যেভাবে বেআব্রু করেছে সংসদীয় কমিটি, তা লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকারকে বেজায় অস্বস্তিতে ফেলবে। কাকলি বলেন, ‘গত দু’বছর ধরে আমরা দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। তাতেই উঠে এসেছে এমন ছবি। যাঁরা আমাদের দেশকে রক্ষা করছেন, তাঁদের এভাবে সরকারি অব্যবস্থার শিকার হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
উল্লিখিত রিপোর্টে বিএসএফের ক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটি জানিয়েছে, ২০১৭ সালে লড়াইয়ে শহিদ (ডেথ ইন অ্যাকশন) হয়েছেন সাতজন। অথচ ওই বছরেই বিএসএফে অসুস্থতার জেরে মৃত্যু হয়েছে ২৫৭ জনের। এবং ইলেকট্রিক শক, বজ্রপাত, পথ দুর্ঘটনা, সাপের কামড় ইত্যাদি কারণে ২০১৭ সালে মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। আত্মহত্যা করেছেন বিএসএফের ৩৮ জন। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছ’বছরের ছবিটা কমবেশি একই।
এক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছে, যেভাবে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীতে লোকক্ষয় হচ্ছে, তাতে অবিলম্বে শূন্যপদ পূরণ করতে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করুক কেন্দ্র। একইসঙ্গে আত্মহত্যার মতো ঘটনা এড়াতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের নেতৃত্বাধীন সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছে, মানসিক সমস্যা কাটানোর উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক কাউন্সিলর, সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্ট নিয়োগ করুক। পাশাপাশি বাহিনীর সদস্যদের ড্রাগ, অ্যালকোহল ব্যবহারের ক্ষেত্রে মন্ত্রক সম্পূর্ণভাবে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলুক।
রিপোর্টে আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে বাসস্থান নিয়ে সন্তুষ্টি না থাকার জন্য সংসদীয় কমিটি অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে। এক্ষেত্রে অবিলম্বে বাসস্থানের অভাব মেটানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। রিপোর্টে তারা বলেছে, আধা সামরিক বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানোই কেন্দ্রের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা উচিত। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ বহু পার্সোনেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী। এবং ল্যান্ডমাইন চিহ্নিতকরণে আরও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করা উচিত। এক্ষেত্রে ‘আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেম/ড্রোন’ এর ব্যবহার করা যায় কি না, তাও মন্ত্রককে খতিয়ে দেখতে বলেছে কমিটি।
দেশের আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে খাবার নিয়ে যে ক্ষোভ রয়েছে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে। তারা বলেছে, বিশেষ করে বর্ষাকালে অন্তত একটানা ছ’মাস পর্যন্ত টিনড ফুডের ব্যবহার আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে। যদি টাটকা খাবার না পাওয়া যায়, তাহলে হিমঘরের মতো বন্দোবস্ত করতে হবে। অবিলম্বে এই ইস্যুতে পরিকল্পনা করতে হবে কেন্দ্রকে। জানা গেছে, চাপে পড়ে সমস্ত দায় স্বীকার করে কেন্দ্র জানিয়েছে, কমিটির সুপারিশ মতো দ্রুত সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।