‘উড়িয়ে ধ্বজা অভ্রভেদী রথে/ ওই যে তিনি ওই যে বাহির পথে’। উত্তর ভারতের রথ সংস্কৃতির বঙ্গীকরণ করতে গিয়ে এভাবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই রথের গায়ে লাগানো হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্রের ছবি। ঠিক হয়েছিল, রথের চাকা গড়ালেই কবিগুরুর পূজা পর্যায়ের এই গান বাজানো হবে। আপাতত এসব অথৈ জলে। রথযাত্রা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেয়ে এখন বিজেপির শীর্ষ নেতারা জড়িয়ে পড়েছেন কোন্দলে। উত্তর ভারতের এই দলের রাজনৈতিক কৌশল ধরে ফেলেছেন বঙ্গবাসী। তাই সখেদে প্রত্যাখ্যান করেছেন বিজেপির রথযাত্রাকে।
নয়ের দশকের শুরুতেই আডাবাণীর রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছিল দিল্লীর রাজনৈতিক মহল। সেই রথযাত্রার রাজনীতিকেই বাংলায় পদার্পণ করাতে চেয়েছিল বঙ্গ বিজেপি। কিন্তু মিছিল-জাঠা-সমাবেশে অভ্যস্ত বাঙালি বিজেপির রথের রশিতে টান দেয়নি। পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, বিজেপির রথ নিয়েই। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত প্রোজক্টার শোভিত বিলাসবহুল বিজেপির এই গাড়ি আসলে রথ নাকি ফাইভ স্টার হোটেল?
গত নভেম্বরেই গেরুয়া শিবিরের বুদ্ধিজীবীরা বিজেপি নেতাদের ‘বাঙালি’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরতে হবে ধুতি। উত্তরভারতের ‘ভারতমাতার’ ছবির বদলে মঞ্চে রাখতে হবে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’র ছবি। এমনকী বাঙালির সঙ্গে একাত্ম হতে গিয়ে ‘রামভক্ত’ অমিত শাহ পুজো দেন তারাপীঠের মন্দিরে। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ধূর্তামি দিয়ে বেশীদিন চালানো যায় না। বাঙালি মন জয়ের জন্য বিজেপির এই কৌশলী চেষ্টা এখন বুঝে ফেলেছে আমজনতা।
আসলে ‘সেজেগুজে’ বেশীদিন টিকে থাকা যায় না। ভেতরে সেই জিনিস থাকতে হয়। বিজেপির পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, রুচি – কোনও কিছুর সঙ্গেই বাঙালির নূন্যতম লেনদেন নেই। তাই ‘আয় রে ছুটে টানতে হবে রশি’ বলে বিজেপির কাতর আহবানে সাড়া দিয়ে কোনও বাঙালি এগিয়ে আসেনি। উল্টে জোরালো ধাক্কা খেয়েছে রথযাত্রা কর্মসূচীই। মাঠে মারা গেছে বিজেপি নেতাদের ‘বাঙালি’ সাজার আপ্রাণ চেষ্টা।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )