থামার নাম নেই। উল্টে বেড়েই চলেছে সিবিআইয়ের গ্যাং ওয়ার! আর তার জেরেই বারংবার মুখ পুড়ছে কেন্দ্রের। সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মার করা মামলায় এবার সুপ্রিম কোর্টে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হল সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনকে (সিভিসি)। এর পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন শীর্ষ আদালতে একাধিকবার উঠে এল অলোক বর্মাকে ছুটিতে পাঠানো নিয়ে কেন্দ্রের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের কথাও।
ভিজিল্যান্স কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে অলোক বর্মাকে পদ থেকে সরিয়ে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। ওই সিদ্ধান্তেরই বিরোধিতা করে সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেন বর্মা। সেই মামলারই শুনানি ছিল গতকাল। শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট সিভিসিকে সরাসরি প্রশ্ন করে, ‘ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সঙ্গে কোনও আলোচনা করলেন না? যে কমিটি সিবিআই ডিরেক্টর নির্বাচনের প্রস্তাব করে।’
একইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘হঠাতই কী এমন জরুরি দরকার পড়ল যে রাতারাতি অলোক বর্মাকে অধিকারচ্যুত করতে হল? কী এমন হল যে ছুটিতে পাঠানোর আগে আলোচনাই করা গেল না! রাতারাতি সিদ্ধান্ত না নিলে বুঝি সিবিআইয়ের মতো এত বড় সংস্থাও নিমেষে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ত?’
সিভিসির তরফে সওয়াল করতে উঠে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা শীর্ষ আদালতের রায় ও আইনের উল্লেখ করে জানান, ‘(সিবিআইয়ের উপর) কমিশনের অভিভাবকত্বের আওতায় কিছু আশ্চর্যজনক এবং অসাধারণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েই থাকে। আর এই অসাধারণ পরিস্থিতির জন্য অসাধারণ প্রতিকার প্রয়োজন।’
এরপরই সলিসেটর জেনারেলের উদ্দেশে দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘সমস্যাটা যে এখনই হয়েছে তা নয়। গত জুলাই মাস থেকে অভিযোগ আনার পর থেকেই সমস্যা চলছে। কিছুদিন পরেই তো অলোক ভার্মার অবসর নেওয়ার কথা। ফলে এতদিন যখন সহ্য করলেন তখন কী এমন প্রয়োজন পড়ল যে রাতারাতি অধিকারচ্যুত করতে হল তাঁকে?’
উত্তরে সলিসেটর জেনারেল বলেন, ‘অন্যান্য মামলার তদন্ত না করে সিবিআই কর্তারা একে অপরের বিরুদ্ধেই তদন্ত করতে শুরু করেছিলেন। সিভিসিকে দেওয়া ক্ষমতা অনুযায়ী, এইধরনের বিষয়ে তদন্ত করাটা তাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সিভিসি যদি তা না করে, তাহলে রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করতে হয়।’
অন্যদিকে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা পদাধিকারবলে সিবিআই ডিরেক্টর নির্বাচনের অন্যতম সদস্য মল্লিকার্জুন খাড়গের হয়ে কপিল সিবালের সওয়াল, ‘সরকারের যখন সরাসরি সিবিআইয়ের ডিরেক্টর নির্বাচনের অধিকার নেই, তখন তাঁকে বরখাস্ত করারও ক্ষমতা নেই। তাই সরকারের হয়ে সিভিসি যা করেছে, তা অবৈধ।’
উভয়পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে গোটা বিষয়ে সরকারকে ‘ন্যায্য’ অবস্থান নিতে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি সিলেকশন কমিটির সঙ্গে আলোচনা না করার কারণ দর্শানোরও নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে কেন্দ্র ফের নতুন করে অস্বস্তিতে পড়ল। দায়িত্ব থেকে রেহাই দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অলোক বর্মাকে ছুটিতে পাঠিয়ে মোদী সরকার ঠিক করেছে কি না, তা নিয়ে আগের মতো, গতকালও দীর্ঘ শুনানি চলেছে।