গো-হত্যার গুজবে সাতসকালেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মৃত্যু হল এক পুলিশ আধিকারিক-সহ দু’জনের। গুরুতর জখম আরও দুই পুলিশকর্মী।
এই মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, দেশজুড়ে প্রচারে বেরিয়ে ঢক্কানিনাদ না করে যোগী আগে নিজের ঘর সামলাক।
বিরোধীদের অভিযোগ, একের পর এক জায়গার নাম পাল্টে হিন্দুত্বের জিগির তুলছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এতে ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়ছে। পাশাপাশি, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ক্রমশ ভেঙে পড়ছে। খুন-ধর্ষণ-ধর্মীয় গোলমালের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুলন্দশহরের স্যানা মহকুমা এলাকায় মাহু গ্রামের বাইরে জঙ্গল লাগোয়া একটি মাঠে প্রায় ২৫টি গরুর মাংস পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরই প্রতিবাদে সকাল ১১টা নাগাদ ওই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ট্র্যাক্টর-ট্রলি ভরে ওই মাংস নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন এলাকার প্রায় চারশো জন। খবর পেয়ে অবরোধ সরাতে সেখানে পৌঁছন ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ-সহ পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতারা। তারপরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
অবরোধ ওঠানোর চেষ্টা হতেই উন্মত্ত জনতা পুলিশকে আক্রমণ করে। জনতার ছোঁড়া পাথরের আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ইন্সপেক্টর সুবোধকুমার সিং। পুলিসশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। থানায় ভাঙচুর চালানো হয়। থানার আশপাশে থাকা মোটরবাইক ও গাড়ি জ্বলতে থাকে।
পুলিশের এক প্রবীণ আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনার সময় যথেষ্ট পুলিশ ছিল। কিন্তু প্রায় শ’চারেক জনতা থানা আক্রমণ করে। পাথর ছুঁড়তে থাকে। তাদের ছোঁড়া পাথর মাথায় লাগে ইন্সপেক্টর সুবোধকুমারের। জখম হয় আরও কয়েকজন পুলিসকর্মী। মোবাইলে এই ঘটনার ভিডিও তুলেছেন কয়েকজন। তেমনই একটি ভিডিওতে গোরক্ষকদের এই তাণ্ডবের চিত্র স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে পাল্টা গুলি চালায় পুলিস। গুলিতে সুমিতকুমার নামে এক বিক্ষোভকারী গুরুতর জখম হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই এলাকায় ৫ কোম্পানি র্যাফ-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জেলাশাসক-সহ পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) আনন্দ কুমার জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এলাকা উত্তপ্ত হলেও এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেরয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, সংঘর্ষ চলাকালীন কী ভাবে সুমিতের গায়ে গুলি এসে লাগল, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে। গোটা ঘটনায় বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।