কোনও রকমের তোলাবাজি বা বেআইনি খাদান যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেখানেই থেমে না থেকে, আবারও কয়লামাফিয়াদের হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং এবার তা আরও কড়া ভাষায়।
বৃহস্পতিবার বেলা সওয়া ১টা নাগাদ বাঁকুড়ার শালতোড়া থেকে হেলিকপ্টারে জামুড়িয়ায় শ্রীপুর মাঠে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক, মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি প্রমুখ। এরপর দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক সভা করেন তিনি।
সেখানেই আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনার কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, অবৈধ খাদান নিয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? বালিখাদানে এখনও নিলাম হয়নি কেন? জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি সেই সময় জানান, ৩৫টি নিলাম হয়ে গেছে। এখনও ২০টি বাকি আছে।
এরপরই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১০০ শতাংশ কাজ চাই। ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছে কেন? যেটাতে কেউ করে খাবে, যেটাতে বালি উঠবে না, সেই খাদান বন্ধ করে দিতে হবে।’ মাঝে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অভিযোগ তোলেন, ‘বহু বেআইনি বালিখাদান থেকে মাফিয়ারা দিনেরাতে বালি তুলছে অবৈধভাবে। বিশেষ করে রাতের বেলা। এটা দেখতে হবে।’
মুখ্যমন্ত্রীও তখন ধমকের সুরে বলেন, ‘যখন আমরা বলি তখনই খাদানগুলোতে অভিযান চালানো হয়। পরে আবার অবহেলা শুরু হয়ে যায়। এভাবে অভিযান চালালে হবে না। পুলিশের একটা দায়িত্ব আছে। মাঝে মাঝে অভিযান চলল আবার মাঝে মাঝে শুয়ে পড়ল, এমনটা চলবে না। পুলিশ আর প্রশাসন শক্তিশালী হলেই এই বাঁদরামোগুলো বন্ধ হবে। আমার স্পষ্ট কথা, অ্যাকশন চাই।’
এরপর তিনি দুই বর্ধমানের জেলাশাসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, দামোদর, অজয় নদের পাড় দিয়েও বালিখাদান রয়েছে। কিছু কয়লামাফিয়া এখান থেকে দিল্লিতে টাকা পাঠাচ্ছে। সরকারের কোনও রাজস্ব আসে না। ওইসব মাফিয়াদের ভাড়াটে গুন্ডারা এসে এলাকায় গন্ডগোল করে, বন্দুকবাজি করে। রাস্তা ভেঙে দেয়, সেতু ভেঙে দেয়। আমি আগেই বলেছি, আমাদের দলের এ সব প্রয়োজন নেই। আমি পছন্দ করি না। তাই সোজাসুজি বলছি, ব্যবস্থা নিতে হবে। দুই জেলার পুলিশ সুপারদের বলছি যদি দেখেন কোনও আইসি এদের মদত দিচ্ছে, তাঁকে বদলি করে দিন।’
গতকাল নবরূপে সাজানো আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনেরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। চলতি বছরে আসানসোল পুরনিগমের মেয়র ১৯৮৩ সালে তৈরি ওই রবীন্দ্র ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নেন। ৮ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই নবরূপে সাজানো রবীন্দ্র ভবনের উদ্বোধন হল মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে। এছাড়াও এদিন আসানসোলের কালীপাহাড়িতে গ্লাস ফ্যাক্টরির বিপরীতে নবনির্মিত ‘আগমনী’ এবং ‘মনে রেখো’ নামে দুটি পার্কের উদ্বোধন করেন তিনি।