একদিকে হিন্দুত্ব, অন্যদিকে বিজেপি। রথযাত্রার মাধ্যমে আসলে হিন্দু ভোটকে এককাট্টা করতে চাইছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশ্যে পুরোপুরি রাজনৈতিক। এর সঙ্গে হিন্দুত্বের, আরও স্পষ্ট করে বললে সনাতন ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। ওয়াকিবহাল মহলের মত এমনই।
সনাতন হিন্দু ধর্মে রথযাত্রাকে বলা হয়, দেবতা যেদিন বাইরে বের হন। রথযাত্রার শুরুতেই থাকে বলরামের রথ। বলরামকে ‘গুরুর প্রতীক’ ধরা হয়। তারপর সুভদ্রার রথ। তিনি ‘ভক্তির প্রতীক’। সব শেষে থাকে জগন্নাথদেবের রথ। তিনি ‘ঈশ্বরের প্রতীক’। মানবদেহে ২০৬ টি হাড় আছে। এই রথ গুলিও তৈরি হয় ২০৬ টি কাঠের খণ্ড দিয়ে। তাই এই রথকে ‘মানবদেহের প্রতীক’ ধরা হয়। যার মানে, মানবদেহেই ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠান।
এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে বিজেপির রথ। যাকে বলা যায়, বিলাসিতার প্রতীক। মুখ্যমন্ত্রী যাকে ব্যাঙ্গ করে বলেছিলেন, ‘রথ তো নয় যেন ফাইভ স্টার হোটেল’। বাংলায় ‘রথযাত্রা’ বিজেপি যে রথ নামাচ্ছে তা শীততাপনিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল অত্যাধুনিক বাস। ভেতরে ১০ জনের থাকার ব্যবস্থা। নেতাদের বিশ্রামের জন্য আলাদা কেবিন। ইন্টারনেট সংযোগ, বায়ো-টয়লেট, প্রজেক্টার, বাসের গায়ে জায়ান্ট স্ক্রিন – সব মিলিয়ে এলাহি কাণ্ড। নেতারা কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে পথ্যের ব্যবস্থাও আছে এই ‘রথ’-এই।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিজেপির এই রথ এবং রথযাত্রার সঙ্গে না আছে ভক্তির সম্পর্ক না ধর্মের। আর এই বিলাসবহুল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসের সঙ্গেও মানবদেহের কোনও সম্পর্ক নেই। যে সম্পর্ক আছে সেটা রাজনীতির। ভোট টানার কৌশল ছাড়া বিজেপির রথযাত্রার অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। আর রথযাত্রা নিয়ে বিজেপি নেতারা যেসব বাণী শুনিয়েছেন তাও পিলে চমকে দেওয়ার মতোই। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘রথ আটকাতে এলে হাসপাতালে নয় শ্মশানে পাঠানো হবে’। বিজেপির আরেক নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় আরও একধাপ টপকে বলেন, ‘রথের চাকাতেই পিষে দেওয়া হবে’। অর্থাৎ ঈশ্বর বা গুরুর পর্যায়েও ফেলা যাচ্ছে না বিজেপির রথযাত্রাকে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিজেপির রথযাত্রা রাজনৈতিক কৌশল, ভোট টানার চমক।